লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি

লিভার মেরুদন্ডী ও অন্যান্য কিছু প্রাণীদেহে অবস্থিত একটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। মানবদেহে মধ্যচ্ছদার নিচে উদরগহ্বরের উপরে পাকস্থলীর ডান পাশে যকৃত বা লিভার অবস্থিত। যকৃত এর রং লালচে খয়েরি। যকৃত দেহের বৃহত্তম গ্রন্থি। এর ওজন দেহের মোট ওজনের (৩-৫%)। এটি দুইটি খন্ডে বিভক্ত।
যকৃতির ওজনের ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি চর্বি দিয়ে পূরণ হলে যে রোগটি হয় তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। বিভিন্ন কারনে লিভারে চর্বি জমাট বাঁধতে পারে। তবে দুর্শচিন্তার কারন নেই ।চলুন লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি,ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা কি, সে সর্ম্পকে জানা যাক এর জন্য পুরো অ্যার্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।

ভূমিকা

যকৃত মানব দেহের সবচেয়ে বৃহত্তম গ্রন্থি। যকৃ থেকে পিত্ত রস মিশ্রিত হয় যা খাদ্য পরিপাকে বিশেষ করে স্নেহ যাতে খাদ্য পরিপাকে একটি অধিক প্রয়োজনীয় উপাদান। যকৃতে ইউরিয়া তৈরি হয়। তাছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয় যকৃতে। এজন্য যকৃতকে জৈব রসায়নগার বলা হয়।

 যকৃত ওজনের ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি চর্বি দিয়ে পূরণ যে রোগটি হয় তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। বিভিন্ন কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি ? অনেকে মনে  এই প্রশ্ন জাগতে পারে , অ্যারর্টিকেল ভালোভাবে পড়ুন তাহলে লিভারের চর্বি কমানোর উপায়  সর্ম্পকে জানতে পারবেন। প্রতিবছর সারা বিশ্বে ১ লক্ষ মানুষ শুধুমাত্র লিভারের রোগে মারা যায়। তবে প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ব্যবহার এর মাধ্যমে মানুষকে কে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।

ফ্যাটি লিভার কেন হয়

লিভার অতিরিক্ত চর্বি জমলে ফ্যাটি লিভারের রোগ হয়। অ্যালকোহল সেবনকারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। লিভারে চর্বি জমা প্রধান কারণ খারাপ খাদ্যাভাস ও অনিয়মিত দৈনন্দিন জীবন। এপিডেমিওলজিক্যাল সমীক্ষা বলেছে যে ভারতের সাধারণ জনসংখ্যার প্রায় ৯%থেকে ৩২% নন- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত। 

ফলে এটি মোটেও হেলাফেলা করার মত জিনিস নয় যাদের ওজন বেশি ডায়াবেটিস বা প্রি- ডায়াবেটিস আছে তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।নন-আলকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ দুই প্রকার। প্রথমটি হল সাধারণ ফ্যাটি লিভার রোগ লিভারে চর্বি আছে কিন্তু লিভারে পৌঁছে কোন প্রদাহ বা ক্ষতি হয়নি। নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস

 বা এনএএসএইচ - এ লিভারের কোষের প্রদাহ বা ক্ষতি হতে পারে এবং এটি ফাইব্রোসিস এবং সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। শরীরে উচ্চ কোলেস্টেরল,স্থূলতা, রক্তে শর্করা উচ্চমাত্রা, ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চমাত্রা, মেটাবলিক সিনড্রোম, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো কারণে নন অ্যালকোহলে ফ্যাটি লিভারের রোগ হতে পারে। লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি ? জানতে হলে নিচের তথ্যগুলো পড়ুন।
 
১. নন-ভেজ এবং দুদ্ধজাত খাবার -এই খাবারগুলো হজম করা কঠিন। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। লিভারের স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। একইভাবে ডিপ ফ্লায়েড,প্যাকেটজাত এবং চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।

২.অ্যালকোহল বা ক্যাফিন বন্ধ -লিভারের রোগ থাকলে অবশ্যই অ্যালকোহল ছাড়তে হবে। সেই সঙ্গে কফি করা চাই নেশা থাকলে সেটাও বন্ধ করতে হবে।

৩.পর্যাপ্ত পানি পান-অনেকে বিশেষ দিনে অ্যালকোহল পান করে থাকে মনে হতে পারে যে অ্যালকোহলে তো পানি মিশিয়ে খাচ্ছেন। কিন্তু এটি শরীরের পানি অভাব আরো তৈরি করে। আমার মনে লাগে তাই অ্যালকোহল পান করলে অবশ্যই তার দ্বিগুণ পানি খেতে হবে। এতে শরীর খারাপ, হ্যাংওভার কম হবে।

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ

লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি ?সেটা জানার আগে ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ গুলো সর্ম্পকে জানতে হবে।   অনিয়ন্তিত  বা অনিয়মিত খাদ্যভাসের ফলে লিভারের উপর চাপ পড়ে। ফলে হজমের সমস্যা হয় ও খাবারে অরুচি চলে আসে।
  • খাবার সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে
  • পেট ফুলে যাওয়ার সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ফুলে যেতে পারে।
  • ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে মাথা ব্যথার ডিপ্রেশন বা মন খারাপ এসব হতে পারে।
আরো পড়ুন :লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি

যে ধরনের খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি, কোন  ধরনের খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে?যে ধরনের খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে সেগুলো হলো; 
  • ফ্যাটি লিভার দূর করতে খাদ্য তালিকা অবশ্য ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার সাহায্য করবে, খুদাকে দমিয়ে রাখবে এবং পেট অনেক বেশি সময় পর্যন্ত ভরা থাকবে।তাই খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
  • বিভিন্ন রঙে শাকসবজি খাদ্য তালিকা রাখতে হবে যেমন বিট রুটি, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বরবটি, ব্রকলি ইত্যাদি।এছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় শাক পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় দেশীয় শাক রাখতে পারেন।
  • অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে যারা আক্রান্ত আছেন, তাদের প্রথমেই অ্যালকোহল গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে।
  • ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত ব্যক্তির যদি দুধ চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে বা কাউন্টেন্স কনডেন্স মিল্ক দিয়ে তৈরী চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সে অভ্যাস পরিহার করতে হবে। ঘন দুধে তরী খাবার বা ফুল ক্রিম মিল্ক খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
  • দেশীয় মৌসুমে বিভিন্ন ফল খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে।
  • খাবার তৈরীতে তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি সেদ্ধ ডিম রাখতে পারেন। ডেইরি প্রোডাক্টের খেতে পারেন টক দই, নন ফ্যাট মিল্ক।
  • অনেকেই ভেবে থাকেন ফ্যাটি লিভার হলে প্রোটিন গ্রহণ একদমই কমিয়ে দিতে হবে এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। আপনাকে অবশ্যই উন্নত মানের প্রোটিন খাদ্য তালিকা যোগ করতে হবে। তবে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন যে মাছটি খাচ্ছেন সেই মাছ একেবারে চর্বির অংশ বাদ দিয়ে খেতে হবে।
  • অনেকেই মুরগির চামড়া খেতে পছন্দ করেন তবে ফ্যাটি লিভার হলে অবশ্যই মুরগির চামড়া খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। মাঝেমধ্যে গরুর মাংস খেতে পারেন তবে ক্ষেত্রে অংশ বাদ দিয়ে শুধু সলিড এক বা দুই টুকরা মাংস খেতে পারবেন এক বেলা।
ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে যারা আছেন এবং ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে উপরোক্ত খাদ্যভাস মেনে চলতে হবে।

ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে যারা আছেন

  • টাইপ টু ডায়াবেটিস যাদের আছে
  • মনোপজ শুরু হয়েছে এমন নারীরা
  • স্থূলতা আছে যাদের
  • শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি যাদের
  • যারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন 

লিভারে চর্বি জমলে কি হয়

ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার শুধু চর্বি জমতে দেখা যায়।নন অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটোহেপাটিসে (ন্যাশ) চর্বি জমার পাশাপাশি লিভারের প্রদাহ হয়।লিভার ফাইবোসিসে যকৃতের কোষকলা গুলো শক্ত হয়ে যেতে থাকে।ন্যাশ রোগীর শেষ পর্যন্ত

লিভার সিরোসিস দেখা দিতে পারে। এমনকি ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

ফ্যাটি লিভার ঝুঁকিপূর্ণ কি

লিভারের সমস্যা ছাড়া ফাটলে রোগীদের ডায়াবেটিস, কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ, যেমন হৃদরোগ, স্টক, উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, রক্তের অতিরিক্ত চর্বি, কোলন ক্যান্সার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে।অনিয়ন্ত্রিত বা অনিয়মিত খাদ্যভাসের ফলে লিভারের উপর চাপ পড়ে। ফলে হজমের সমস্যা হয় ও খাবারে অরুচি চলে আসে।ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

    তাদের ফ্যাটি লিভার পরীক্ষা করা প্রয়োজন

    যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস আছে, যারা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন। যদি রুটিন পরীক্ষার ৬ মাসের বেশি সময় ধরে বাড়তি লিভার এনজাইম( এএলটি,এ এসটি) পাওয়া যায়, তাহলে পরীক্ষা করতে হবে। যাদের হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ আছে মেটাবলিক সিনড্রোমের (উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি) রোগীদের পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

    ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা কি

    ফ্যাটি লিভার এই আক্রান্ত হলে লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।জীবন যাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন ফ্যাট লিভারের প্রধান চিকিৎসা।
    ১.খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে। খাবারে শর্করা জাতীয় ও স্নেহ জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। খাসি ও গরুর মাংস কমিয়ে শাকসবজি ফল ও মাছের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, মধ্যপান পরিহার করুন।
    ২.শারীরিক পরিশ্রম ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্পূর্ণ সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা (নিয়মিত হাটা সাইক্লিন ও সাঁতার কাটা ইত্যাদি) প্রয়োজন ।
    ৩.ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
    ৪. লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে ফ্যাটি লিভারের ওষুধ সেবন করুন।
    ৫.উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হৃদরোগ রক্তে জরুরি কারণে সঠিক চিকিৎসা নিন।

    লেখকের মন্তব্য 

    বিভিন্ন কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে।লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি সে সম্পর্কে উপরে জানলাম। ফ্যাটি  লিভার থেকে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।এটা ছোট খাটো সমস্যা নয়। তাই  ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব  লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

    comment url