যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন


ইসলামি জীবন বিধানে মৌলিক যে পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে যাকাত তন্মধ্যে অন্যতম। ঈমান, সালাত, সাওম, হজ ও যাকাতের পাঁচটি বিধান মেনে চলা মুসলমানের জন্য ফরজ ও অব্শ্যকর্তব্য। এই পাঁচটি বুনিয়াদি বিধানের মধ্যে তিনটি বিধান ঈমান সালাত ও সাওম সকল মুসলমানের উপর ফরজ করা হয়েছে।

আর বাকি দুইটি বিধান যাকাত ও হজ শুধুমাত্র সম্পদশালী ও সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর ফরজ করা হয়েছে। তাই যাকাত একটি আর্থিক ইবাদত।কতোগুলো যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত র‍য়েছে।চলুন যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন , যাকাতের তাৎপর্য গুরুত্ব ও হিসাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

ভূমিকা

যাকাত একটি আরবি শব্দ এর অর্থ হল পবিত্রতা, বৃদ্ধি, আধিক্য, প্রাচুর্য ইত্যাদি। যাকাত প্রদান করলে যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তির মনে কৃপণতার যে কলুষতা রয়েছে তা দূরীভূত হয়ে মন পবিত্র হয়। তাছাড়া সম্পদের যে অধিকার রয়েছে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে তা করা হয়। ফলে এর মাধ্যমে তার সম্পদও পবিত্র হয়। যাকাত আল্লাহ ঐ ব্যক্তির বরকত দান করেন।
যাকাত মূলত গরিব মানুষদের কে দিতে হয়।ধনী ব্যক্তিদের অর্থের উপর গরিব মানুষদের হক পূরণ হয় যাকাত প্রদানের মাধ্যমে।

যাকাত কাদের কে দিতে হয়

আল্লাহ তাআলা ধনী ব্যক্তিদের কে নির্দেশ দিয়েছেন গরিব অসহায় মানুষদের যাকাত প্রদান করতে।যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন । যাকাত প্রদানের ফলে দরিদ্র্যের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়, তাই বলা হয় যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ ও বৃদ্ধি পায়।ইসলামী পরিভাষায় যাকাত হচ্ছে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত (নিসাব পরিমাণ) সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ বছর শেষে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মালিক বানিয়ে দেওয়া।

কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম সম্পদশালী ব্যক্তি নিকট যদি ৭.৫ তোলা স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ কমপক্ষে এক বছর সঞ্চিত থাকে, তাহলে তাকে এর শতকরা ২.৫ হারে আদায় করতে হয়।আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে বিভিন্ন আয়াতে আমাদেরকে যাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন এ থেকে যাকাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
"আর তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান কর। "( সূরা আল বাকারা, আয়াত :৪৩)
যাকাত ধনীদের সম্পদের আল্লাহ নির্ধারিত গরিবের অংশ যা প্রদান করা অবশ্যই কর্তব্য বা ফরজ এটি কোনো ধরনের দান বা অনুকম্পা নয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,







'তাদের ধনীদের ধন-সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।' (সূরা আয-যারিয়াত আয়াত:১৯)
যাকাত সম্পর্কে হাদিস
ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ থেকে গরিব, অভাবী ও অসহায়দের এ হক আদায়ের নির্দেশ দিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, 'তোমারা তাদের জানিয়ে দাও যে মহান আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীদের সম্পদ থেকে তা তাই করে নিজেদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া হবে। '(বুখারী)

যাকাতের তাৎপর্য

যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন ।যাকাত একটি আর্থিক ফরজ ইবাদত। এর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র আর্থিক লেনদেন বা কয়েকটি কিংবা সমষ্টিক পর্যাপ্ত রাজ্য সহযোগিতা নয়। এ অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনকে পরিশুদ্ধ করে তাকে শুদ্ধতম মানুষরূপে গড়ে তোলা এবং মহান আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা।

হাদিসের কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, 'হে বনি আদম! আমার পথে খরচ করতে থাকো। আমি আমার অফুরন্ত ভান্ডার থেকে তোমাদের দিকে থাকবো।' (বুখারী ও মুসলিম)
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আরো বলেন,
'দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, আল্লাহর বান্দাদের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী। অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ থেকে দূরে,আল্লাহর বান্দাদের থেকে দূরে এবং জাহান্নামের সন্নিকটে। আর একজন জাহেল দানশীল একজন কৃপণ আবেদ অপেক্ষা অধিক প্রিয়।'(তিরমিযী)

সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিতকরণ ইসলাম যে সকল ব্যবস্থা মানুষকে উপহার দিয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে যাকাত। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
'আর মুশরিকদের জন্য শুধুই ধ্বংস যারা যাকাত আদায় করে না। '(সূরা হা-মিম আস-সাজদা, আয়াত :৬-৭)

যাকাতের ধর্মীয় গুরুত্ব

যাকাত মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় ইবাদত। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান নর নারীর উপর যাকাত ফরজ। যাকাত দানের মাধ্যমে ব্যক্তির উপযুক্ত সম্পদ পবিত্র হয়। ধন-সম্পদের মোহ ত্যাগ করেছেন সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। মানুষ তার জীবনের চেয়ে সম্পদকে বেশি ভালোবাসে।
এজন্য মানুষ সম্পদ আহরণের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে অথচ আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য সে সম্পর্কে দান করে থাকে তাই যাকাত দানকারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে অপর পক্ষে যাকাত আদায় না করলে মহা পাপী হবে এবং জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে।

 একজন মুসলিম প্রদান করার মাধ্যমে তার ধন-সম্পদের জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এর ফলে সে আত্মিক শান্তি পায়।আল কুরআনের ঘোষণা
"তাদের সম্পদ হতে 'সাদকা' (যাকাত) ফোন করবে। তুমি তাদেরকে পবিত্র এবং পরিশুদ্ধ করবে। তুমি দোয়া করবে তার জন্য আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।" (সূরা তাওবা আয়াত :১০৩)
আরো পড়ুন :যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন ।

যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব

যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজে পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধ, সহৃদয়তা ও সহনশীলতা তার প্রকাশ ঘটে। অর্থনৈতিকভাবে যারা অসচ্ছল তারা আর্থিকভাবে সক্ষম হয়ে থাকে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমে থাকে। যাকাত দানের ফলে এতিম, বিধবা, বৃদ্ধ, রুগ্ ণ, পঙ্গু ও অক্ষম ব্যক্তিরা তাদের অভাব দূর করতে পারেন। এছাড়াও যাকাতের মাধ্যমে সম্মিলিত প্রচেষ্টা সমাজ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজ করা হয়ে থাকে। যার ফলে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়।

যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন ।সম্পদশালীদের সম্পদ যাকাত আকারে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর হাতে আসে। যাকাতের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে সম্পদের প্রবাহ গতিশীল হয়। দরিদ্র শ্রেণি যাকাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ কাজে লাগিয়ে জাতীয় উপাদান বৃদ্ধি করে থাকে। অভবি মানুষ তার অভাব পূরণ করতে পারে ক্ষুদ্র অর্থ আয়ের মানুষ যাকাতের অর্থকে পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে থাকে। প্রতিবছর যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত

যাকাত ফরজ ইবাদত। তবে সকল মানুষের উপর যাকাত বাধ্যতামূলক নয়।যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ নিম্নরূপ-
  • মুসলমান হওয়া
  • নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া
  • নেসাব প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া
  • ঋণগ্রস্ত না হওয়া
  • নিসাব পরিমাণ সম্পদ মালিকের কাছ কমপক্ষে ১ বছর কাল থাকা।
  • জ্ঞান সম্পূর্ণ হওয়া এবং
  • বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হওয়া
  • স্বাধীন হওয়া
আরো পড়ুন :যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন ।

যাকাতের নিসাব

যাকাত ধার্য হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিসাব সম্পদ থাকা। 'নিসাব' বলা হয় নির্ধারিত নিম্নতম সীমা বা পরিমাণকে। এই পরিমাণ নির্ধারিত ব্যক্তির সর্বমোট আয় থেকে যাবতীয় বায় বাদ দেওয়ার পর উদ্ভূত অর্থ এবং তার পূর্বে সঞ্চয় ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ যুক্ত হবে। প্রয়োজনীয় ব্যয় বাদে সারে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলার স্বর্ণ বা এর সমতুল সম্পদকে 'নিসাব' বলা হয়।

এছাড়াও নগদ ডাকার মোট পরিমাণ কে মিলিয়ে সাড়ে সাত ভরে স্বর্ণের বা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্যের দামের সমান হলে তাতেও ২.৫% হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে। এছাড়া ফসলের যাকাত (উশর),ফল,তরিতরকারি পশু সম্পদ ইত্যাদির উপর যাকাত বিধান আছে।

যাকাত বন্টনের খাত সম্পর্কে জানুন

যাকাত বন্টনের খাতসমূহ পবিত্র কোরআনে একটু করে দেওয়া হয়েছে।যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন । মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন'সদকা তো নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য যাদের চিত্ত আকর্ষণকরা হয় দাস মুক্তির জন্য ঋণ ভরাক্রান্তদের জন্য আল্লাহর ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়?( সূরা তওবা, আয়াত :৬০)
উক্ত আয়াতের জগতের অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন তার নিম্নরূপ উপস্থাপন করা হলো :
  • ফকির বা দরিদ্র
  • মিসকিন বা নিঃস্ব
  • যাকাত আদায়কারী কর্মচারী
  • চিত্ত আকর্ষণের জন্য
  • দাসমুক্তি
  • ঋণমুক্তি
  • ফী সাবিলিল্লাহ
  • মুসাফির

লেখকের মন্তব্য

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত পূরণ হলে যাকাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। তাই সঠিক নিয়মে যাকাত আদায় করা। যাদের যাকাত আদায় করার রয়েছে তাদের উচিত নিজে যাকাত প্রদান করা এবং অন্যকে যাকাত দানে উৎসাহিত করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই যাকাত আদায় করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url