কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা বাদাম স্বাস্থের জন্য অনেক উপকারি।কাঁচা বাদাম এ আছে প্রচুর প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন ই, রিবোফ্লাভিন নায়াসিন,শর্করা যা শরীর এর জন্য অনেক উপকারী। চিনা বাদামের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
চলুন কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ,পেস্তা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক এর জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ভূমিকা
বাদাম অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। সকালে নিয়মিত কাঁচা বাদাম খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করে। নিয়মিত কাঁচা বাদাম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে হাড়ের গঠনে বেশ উপকার পাওয়া যায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফ্যাটি
এসিডের পরিমাণ এবং বাদামে থাকা টানিন এর পরিমাণও কমে।তাই রাতে বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটি খেলে পুষ্টিগণ আরো বেড়ে যায়। তাছাড়া কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
.
কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
সকালে নিয়মিত যারা কাঁচা বাদাম খান তাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করে।।যা শরীরে পুষ্টি শোষণ করার জন্য অনেক উপকারী। সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো;
নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলোঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: কাঁচা বাদামের মত খাওয়ার ফলে হাড় শক্তিশালী হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে যারা নিয়মিত কাঁচা বাদাম খায় তাদের অন্যদের শরীরের তুলনায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। এছাড়া মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সারের অসংখ্য দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা বাদামের ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিনের মত বিভিন্ন উপাদান রয়েছে।
রক্ত স্বল্পতার সমস্যা প্রতিরোধ: কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং অপকারিতা ও রয়েছে।নিয়মিত চিনা বাদাম খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। এতে শরীরের রক্তের অভাব দূর হয় এবং রক্ত চলাচল ভালো হয়। যার ফলে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ হয়। দাদা ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার এটি ভিজে গেলে এর বৈশিষ্ট্য আরো বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত কাঁচা বাদাম খেলে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়। তাছাড়া চেনা বাদামে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ক্যালসিয়াম, আয়রন,সেলেনিয়াম ইত্যাদির মতো নানা পুষ্টি উপাদান।রাতে বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খেলে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি: প্রতিদিন সকালে ভেজানো চিনা বাদাম খেলে শরীরের রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ থাকে। চিনা বাদাম হাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের মত দুরারোগ্য রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুগার রোগীরা নিয়মিত প্রতিদিন সকালে ৫০ গ্রাম পরিমাণ চিনা বাদাম খেলে অনেকটা উপশম পাবেন।
ব্যথা থেকে মুক্তি : শীতের গুড়ের সঙ্গে নিয়মিত ভেজানো চিনা বাদাম খেলে শরীরে জয়েন্ট ও কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চিনা বাদাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। তাছাড়া যাদের বাতে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য চিনা বাদাম খাওয়ার অনেক উপকার ও রয়েছে। নিয়মিত ভেজার আর ফলের স্মৃতিশক্তি অধিষ্ট শক্তি বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে শারীরিক শক্তি ও প্রাণশক্তি বজায় রাখতে চিনা বাদাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সকালে ভেজানো বাদাম খাওয়া কি উপকারী
পুষ্টিবিদরা অনেক সময় বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন।অনেকের বাদাম খেলে হজমে সমস্যা হয়। সকালে ভেজানো বাদাম খাওয়া অনেক উপকারী। অন্তত ৬-৮ ঘন্টা বাদাম ভিজিয়ে রেখে তারপর সেটি সকালে খেতে হবে। ৬-৮ ঘন্টা বাদাম ভিজিয়ে রাখলে থাকা উষ্ণতা কমে এবং ফ্যাটি এসিড এর পরিমাণও কমে।
যা শরীরে পুষ্টি শোষণ করার জন্য অনেক উপকারী। বাজারে থাকা ফেনোলিক যৌগ ট্যানিন সহজে হজম হয় না। ফলে বাদাম খেলে অনেকের বদহজমের সমস্যা হয়ে থাকে। টানিন শরীরের প্রোটিন পরিপাক ও জটিল করে তোলে। তাই আগে থেকে বাদাম ভিজিয়ে রাখলে ট্যানিন এর পরিমাণ কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফ্যাটি এসিডের পরিমাণও কমে। বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইটিক আসিড শরীরে আয়রন জিংক এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে নুন তৈরি করে,যা খাদ্যনালীতে দ্রবীভূত হয় না। এই ফাইটিক অ্যাসিড শরীরে পেপসিন, ট্রিপসিন পরিমাণ কমে প্রোটিন পরিপাকেও বাঁধা দেয়।
তাই বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ঢাকা ফাইটিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায়।কাঠবাদামের মতো কিছু বাদাম আছে যেগুলো বেশ শক্ত হয়। সহজে পরিপাক হয় না। তাই সেসব বাদাম গুলোকে ভিজিয়ে রাখলে বাদাম গুলো অনেকটাই নরম হয়। সহজে ভাঙা যায় এবং হজম করতে সুবিধা হয়।
সব বাদাম বেশিক্ষণ ভেজানোর প্রয়োজন পড়ে না। তবে কাঠবাদাম খাওয়ার আগে অন্তত ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা উচিত। তবে আখরোট, পাইননাথ বা হেজেল নাট ৮ ঘন্টা ভেজিয়ে রাখলেই হয়। কাজুবাদাম ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা যায়।পুষ্টিবিদরা স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে দিন শুরু করতে বলেন।
কেউ কেউ সকালে বাদাম খেতে বলেন আবার কেউ কেউ খালি পেটে কিসমিস বা কলা খেতে বলেন। বাদামের পাশাপাশি খালি পেটে কিসমিস বা কলা বা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। পুষ্টির বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুম থেকে উঠে ২০ মিনিটের মধ্যে একটি কলা বাদাম বা কিসমিস শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যারা ডায়াবেটিসের আক্রান্ত, দৃষ্টি দুর্বল, ত্বক রুক্ষ সমস্যায় আছেন তাদের বাদাম খাওয়া শুরু করা উচিত।
পেস্তা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
পেস্তা একটি সুস্বাদু বাদাম। এটি স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে দিলে সেই খাবারের স্বাদ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। পেস্তা শুধু হেঁটে দিক দিয়েও অনেক উপকারী। পেস্তায় রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ। পেস্তা যেমন শরীরের জন্য উপকারী তেমনি ক্ষতিকর ও।
পেস্তার উপকারিতা
হার্ট ভালো রাখতে: পেস্টায় মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হার্টের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন ডায়েটে পেস্তা থাকলে রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। পেস্তা এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার জন্য হার্ট সুস্থ হার্ট সুস্থ থাকে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখতে: পেস্টার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে। পেস্তার গ্লাইসেমিক সূচক খুব কম। পাশাপাশি ফাইবার এবং প্রোটিনের পরিপূর্ণ,যার রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে
সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চোখের জন্য ভালো: দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে পেস্তা খুবই উপকারী। পেস্তায় থাকা আন্টি অক্সিডেন্ট জেক্সানথিন চোখের জন্য খুবই উপকারী। চোখের নানা সমস্যার জন্য দারুন কার্যকর। বিশেষ করে বয়স কালে মাকুলার ডিজেনারেশন এবং ছানি হওয়া ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।
স্ট্রেস কমাতে: অন্যান্য বাদামের তুলনায় পেস্তা বাদামে আন্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি থাকে। ভিটামিন এ সহ আরো অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে পেস্তা বাদামে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
পেস্তার অপকারিতা
শরীরের জন্য অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। তাই অত্যাধিক পেস্তা খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতি হয়। কাঁচা বাদাম খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা ও রয়েছে। এগুলো হলো ;
ওজন বেড়ে যাওয়া: পেস্তা বাদাম বেশি খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এক কাপ পেস্তায় ৭০০ এর অধিক ক্যালোরি থাকে। তাই পেস্তা খাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ না থাকলে উপকারের বিপরীত হতে পারে। যারা ওজন কমাতে চান তাদের এই বিষয় খুব খেয়াল রাখা উচিত।
হজমে গোলমাল: পেস্তা ভরপুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। তাই একসাথে অনেকগুলো পাস্তা খেলে কাল দেখা দিতে পারে। যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস্টিক এবং ডায়রিয়ার ভুগতে পারেন।তাই সব সময় পেস্তা অল্প পরিমাণ খাওয়াই শ্রেয়।
রক্তচাপ বাড়ায়: দোকান থেকে কেনা পেস্তায় প্রচুর পরিমাণে লবণ মেশানো থাকে,যা বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। আর অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে এবং শরীরে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিডনিতে পাথর: পেস্তায় থাকে অক্সালেট। এই অক্সলেট কিডনিতে পাথর অন্যতম কারণ। দীর্ঘদিন ধরে বেশি পরিমাণে পেস্তা খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
নিয়মিত বাদাম খাওয়ার রোগ নির্মূলে সহায়তা করে। কিন্তু এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি অপকারিতা ও রয়েছে।
বাদামের উপকারিতা
মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে: কাজু বাদামে এক প্রকার তেল থাকে যা ভিটামিন সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ভিটামিন বি। এইজন্য এটি একটি শক্তিশালী খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ভিটামিন বি মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: বাদামে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম রয়েছে এবং সোডিয়ামও রয়েছে কম পরিমাণে। যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে। সোডিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রক্ত বৃদ্ধি পায় তখন রক্তচাপ এর মাত্রাও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত বাদাম খাওয়া উপকারী।
ক্যান্সার থেকে বাঁচায়: কাজু প্রুনোথোসিনিডিন ফ্লাভোনিঅইডের একটা প্রকার ক্যান্সার কোর্সগুলোকে ক্রমবর্ধমান হতে আটকায়। কাজু বাদাম নিয়মিত ক্যান্সারের কিছু রূপ থেকে রক্ষা করে।
লেখকের মন্তব্য
উপরে আমরা কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html
comment url