খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
ভূমিকা
কিসমিসে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রাকৃতিকভাবে কিসমিস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। কিসমিসে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের জন্য চুল ও ত্বক উজ্জ্বল হয়। কিসমিস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কিসমিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনে অপকারিতা ও রয়েছে।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্ন উপায়ে কিসমিস খাওয়া যায়। নিচে কিসমিস হওয়ার কয়েকটি খাওয়ার নিয়ম গুলো দেওয়া হলো;
- কিসমিস এর গুনাগুন অনেক। কিসমিস কাঁচা অবস্থাতে খাওয়া যায়। এরজন্য কিসমিসকে অবশ্যই ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে।
- কিসমিস তৈরি হয় আঙ্গুর ফল থেকে। কিসমিস বিভিন্ন রকমের খাবারের সাথে মিস করে খাওয়া যায় আবার এমনিও খাওয়া যায়। কিসমিস সেমাই, পোলাও' কোরমা সহ বিভিন্ন খাবারের সাথে মিস করে খাওয়া যায়। এতে সেসব খাবারগুলোর স্বাদ বেড়ে যায়।
- কিসমিস রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে এবং সে পানিসহ খেলে শরীরে অনেক পুষ্টিগুণ পাবে।
- প্রতিদিন দিনের ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া খাওয়ার প্রয়োজন।
খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস যেমন মজাদার তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চলুন খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানি,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে - কিসমিসে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যদি কেউ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চায় তাহলে তাকে নিয়ম করে খালি পেটে ভেজা কিসমিস ও পানি খেতে হবে।
হজম শক্তি বাড়াতে - সুস্থ থাকার জন্য হজম শক্তি ঠিক থাকা অত্যন্ত জরুরী। বিভিন্নভাবে হজম শক্তি বাড়ানো যায়। কিসমিস হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কেউ যদি হজম শক্তি বাড়াতে চায় তাহলে নিয়ম করে রাতে এক গ্লাস পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে সে কিসমিস পানিসহ খান। এভাবে নিয়মিত পনেরো দিন যদি খালি পেটে কিসমিস খাওয়া যায় তাহলে এর ফলাফল কিছুদিন এর মধ্যে বুঝতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে - কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম। উচ্চ রক্তচাপ পেশার রক্তে সাহায্য করে। যেহেতু কিসমিসের মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে তাই প্রাকৃতিকভাবে কিসমিস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
বিষমুক্ত শরীর - শরীরকে দূষণমুক্ত রাখতে কিসমিস অনেক কার্যকরী। চারদিকের দূষণে মানুষ যখন খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খেলে শরীর হবে বিষমুক্ত।
দাঁত এবং চুলের সমস্যা দূর - কিসমিসে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের জন্য চুল ও ত্বক উজ্জ্বল হয়। কিসমিসের জন্য পানি চলে চুলের জেল্লা বাড়ে এবং দাঁত মজবুত থাকে।
হাইড্রেশন - গরম কালে কিসমিস পানি খাওয়া ভীষণ উপকারী। কারণ গরমে শরীরের পানির মাত্রা কমে যায়, কিসমিসের পানি খেলে যার শরীরের পানির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। সপ্তাহে তিন দিন এই পানি খেলে শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা মিটবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় - নিয়মিত কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটা কমে যায়। যদি কেউ পেটের সমস্যায় ভোগে তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পান তারা ওষুধের বদলে নিয়মিত খেতে পারেন। এই যে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকটা নিরাময় হবে।
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। কিসমিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকারিতা ও রয়েছে। কিসমিস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু অপকারিতা দেখা যায় এগুলো হলোঃ
- যারা শরীরের ওজন কমাতে চায় তাদের অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ কিসমিস শরীরের ওজন বাড়ায়।
- যাদের ডায়াবেটিস সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকবে কারণ অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
- কিসমিসে এলার্জি সমস্যা বাড়তে পারে। তাই তাদের এলার্জি রয়েছে তাদের কিসমিস না খাওয়াই ভালো।
- কিসমিস খাবার হজমে বিঘ্ন ঘটায় তাই অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
কোনো কিছুই অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া উচিত নয়। যেকোনো কিছু নিয়মে সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। ঠিক সেই রকম প্রতিদিন কতটুক পরিমাণে কিসমিস খাওয়া উচিত তা আমাদের জানা প্রয়োজন। আসলে এটি নির্ভর করে মানুষের শারীরিক ও দৈহিক অবস্থার উপর। সব মানুষের শারীরিক ও দৈহিক
অবস্থা একই রকম নয়। তাই নিজেদেরকে বুঝে নিতে হবে কি পরিমান কিসমিস খেলে আমাদের ও শারীরিক অবস্থা ভালো থাকবে। কিসমিসে রয়েছে অধিক পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের দেহ তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করতে পারে। সাধারণত ১০০ গ্রাম আঙ্গুরের মধ্যে ৬৯ গ্রাম ক্যালরি থাকে আর
১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে ২৯৯ গ্রাম ক্যালরি থাকে। সুতরাং কিসমিস হলো ক্যালরি এবং গ্লকোজ জাতীয় খাদ্যদ্রব্য। কিসমিসে থাকা গ্লকোজ শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জির সরবরাহ করে। শরীরের দুর্বলতা এবং হাড় গঠনের জন্য কিসমিস খুবই উপকারী কারণে এর মধ্যে থাকার ক্যালসিয়াম শরীরের
দুর্বলতা ও হার গঠনের সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন একজন স্বাভাবিক মানুষের ৪৫ থেকে ৫৫ গ্রাম কিসমিস খাওয়া উচিত এর বেশি নয়। আর যদি কেউ এর থেকে বেশি পরিমাণে খায় তাহলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই সঠিক পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন।
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
অনেকেই মনে প্রশ্ন জাগে রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়? উত্তর হচ্ছে রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়। অনেকের গ্যাস্টিকের সমস্যা এবং ভালোভাবে ঘুম না হওয়ার সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে কিসমিস অনেক কার্যকরী। আবার যাদের ঘুম থেকে
ওঠার পর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ব্যথা করে তাদের জন্যও কিসমিসের মধ্যে উপকারিতা রয়েছে। তবে কিসমিস পেতে হলে এর জন্য কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি কিসমিস খাওয়া যাবেনা অথবা সংখ্যায় ১০ থেকে ১৫ টির অধিক খাওয়া যাবেনা। এর চেয়ে বেশি খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে।
দুধ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। অপরদিকে কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ম্যাঙ্গানিজ। তাই দুধের সাথে কিসমিস খেলে এর উপকারিতা আরো বেড়ে যায়।দুধ কিসমিস খাওয়ার মধ্যে যে উপকারিতা
গুলো রয়েছে সেগুলো হলো ;- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
- পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।
- শরীরের দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিত সহায়তা করে।
- ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
- শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখে।
দুধ কিসমিস খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ টি কিসমিস ছেড়ে দিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। ১০ মিনিট পর মিশ্রণটি খেতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে তিন দিন খেতে পারলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস হচ্ছে শুকনো খাবার। তাই যেকোনো সময়ে এটি সহজে খাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া যাবে কি? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ অবশ্যই খাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া অনেক উপকারী। কিসমিসের মধ্যে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার যা গর্ভ অবস্থায় নারীদের জন্য খুবই উপকারী। চলুন গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানি,
হিমোগ্লোবিন বাড়ায় : গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ নারীরা রক্তশূন্যতায় সমস্যায় ভুগে থাকেন। কিসমিস হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। তাই কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে রক্তশূন্যতা কমে। যা গর্ভাবস্থায় খুবই উপকারী।
শাসনতন্ত্র এর সমস্যা : কিসমিস শাসনতন্ত্র এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় হজম শক্তি ও শাসনতন্ত্র এর অনেক সমস্যা দেখা যায়। কিসমিসের মধ্যে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং শাসনতন্ত্র এর সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
শক্তি যোগায় : কিসমিসের মধ্যে রয়েছে মিনারেল, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ,ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। যা গর্ভাবস্থায় শিশু বেড়ে ওঠার জন্য খুবই কার্য করে উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণের শক্তি যোগাতে, দুর্বলতা দূর করতে এবং নিউট্রেশন কে বাড়ানোর কাজে কিসমিস সহযোগিতা প্রদান করে। তাই কিসমিস খাওয়া গর্ভাবস্থায় অনেক উপকারী।
হাড় মজবুত : আমরা আগেই জেনেছি কিসমিস করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় মা যদি নিয়মিত কিসমিস খায় তাহলে কিসমিসের মধ্যে থাকা আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি উপাদান শিশুর হাড় মজবুত করনে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কিসমিস হাওয়ার অভ্যাস করতে হবে তবে সেটা বেশি পরিমাণে নয়।
খাবারের চাহিদা বাড়ায় : সাধারণত দেখা যায় গর্ভাবস্থায় মেয়েদের খিদের মাত্রা কম থাকে। কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে খিদের মাত্রা বাড়ানো যায়। এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্য
আমরা উপরে কিসমিস খাওয়ার ও খালি পেটে কিসমিস উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক তবে এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। অতিরিক্ত মাত্রায় কিসমিস খাওয়া যাবে না। পরিমাণমতো কিসমিস খেতে হবে। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করার করবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html
comment url