অতিরিক্ত মাংস খেলে কি সমস্যা দেখা দিতে পারে

সুস্থ থাকতে যেকোনো খাদ্য পরিমিত খাওয়া প্রয়োজন। মুসলমানদের দুইটির ধর্মীয় উৎসব এর মধ্যে একটি হলো কোরবানি ঈদ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু জবাহ এর মাধ্যমে কোরবানি ঈদ উদযাপন শুরু করে। আর কোরবানি ঈদ মানে ঘরে ঘরে নানা রকম মাংসের রেসিপি।
এই সময় অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে অতিরিক্ত মাংস খেলে কি সমস্যা দেখা দিতে পারে? অতিরিক্ত মাংস খেলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভূমিকা

বছরের বিভিন্ন সময়ে আমরা মাংস খেয়ে থাকলেও কোরবানি ঈদের সময় মাংস খাওয়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। মাংস রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। মানবদেহে এসবের চাহিদা মেটানোর জন্য অবশ্যই মাংস খাওয়া প্রয়োজন। তবে সেটা মাত্রারিক্ত নয়। অতিরিক্ত মাংস খেলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে তা কিছুটা হলেও আমাদের ধারণা রয়েছে। অতিরিক্ত মাংস খেয়ে খাওয়ার ক্ষতিকারক দিক অনেক। তার পরিমাণমতো মাংস খেতে হবে।

অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার অপকারিতা

অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগ এর জন্ম হয়। নিচে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার অপকারিতা গুলো দেওয়া হলোঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোলন ক্যান্সার -
অতিরিক্ত গরু বা খাসির মাংস খেলে মানুষের শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে শরীরে আরো নানান ধরনের রোগের বাসা বাঁধে। যারা নিয়মিত তিন বেলায় গরু খাসি বা ভেড়ার মাংস খেয়ে থাকে তাদের কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যদের তুলনায় ১২ ভাগ বেশি।

কিডনি ও ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি - মাংস মূল উপাদান হল প্রোটিন।অতিরিক্ত মাংস ছেলে এর মাত্রারিক্ত প্রোটিন কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে ইউরিক এসিডের মাত্র বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। লাল মাংস দিনের পর দিন খেলে ফুসফুস ক্যান্সার, খাদ্যনালির ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস আরো ঝুঁকিপূর্ণ। এটি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।  

আরো পড়ুনঃ লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ - গরুর মাংসে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে এবং বাড়াতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে যা পরবর্তীতে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।যারা নিয়মিত লাল মাংস খাই তাদের মধ্যে ধূমপান, মদ্যপান সহ বিভিন্ন বদ অভ্যাস গড়ে ওঠে। যা ধীরে ধীরে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়।

ওজন বাড়াতে পারে - অনেক সময় পশুর ওজন বৃদ্ধি ও মুক্ত রাখার জন্য ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনাল ওষুধ খাওয়ানো হয়। মানুষ যেহেতু পশুর মাংস খায় তাই সেসব পশুর মাংস মানবদেহে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। যার মধ্যে রয়েছে অল্প বয়সে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস বা স্পার্মের সংখ্যা 

কমে যাওয়া, ব্রেনের কার্যক্ষমতা যাওয়া, শক্তি কমে যাওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়া। অনেক সময় মাংস জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে হজম প্রক্রিয়া বাড়ানোর জন্য কোমল পানীয় পান করা হয় যা একেবারেই উচিত নয়। এতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। 

ডায়াবেটিস হতে পারে - বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ একটি গবেষণা চালায় ১ মিলিয়ন মানুষের উপর। এই গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ৫০ গ্রাম বা এর বেশি মাংস খায় তাদের হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকে অনেক বেশি থাকে।

 যা অন্যদের তুলনায় ৪২℅ বেশি এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকে থাকে ১৯ ℅। এবং যাদের বয়স ৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তারা অতিরিক্ত মাংস খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি আরো তিন গুণ বেশি থাকে।

 খাসির মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকে খাসির মাংস খেতে পছন্দ করে না বিভিন্ন কারণে। তবে খাসির মাংসের উপকারিতা রয়েছে। খাসির মাংস হলো প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজের ভালো উৎস। এছাড়া ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন বি ৬, আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম থাকে। যা মানবদেহ সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত খাসির মাংস খেলেও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

খাসির মাংসের উপকারিতা

খাসির মাংসে রয়েছে বেশি মাত্রায় লৌহ। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। খাসির মাংসের পুষ্টির সুবিধা গুলো সম্পূর্ণভাবে লাভের জন্য কম চর্বিযুক্ত বেছে নিয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করলে খাসির মাংসের অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে। চলুন খাসির মাংসের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানা যাক,

প্রোটিনের উৎস হিসেবে

খাসির মাংস উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। ১০০ গ্রাম খাসির মাংসের প্রায় ২৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্রোটিনের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে খাসির মাংস কাজ করে।

প্রোটিনের উপকারিতা

পেশী বৃদ্ধি ও মেরামত - প্রোটিন বেশি বৃদ্ধি ও মেরামতের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি মানবদেহে শরীরের টিস্যু এবং কোষের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইমিউন সিস্টেম - প্রোটিন মানবদেহে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

হরমোন ও এনজাইম - প্রোটিন হরমোন ও এনজাইম তৈরিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

রক্ত এবং হাড় - প্রোটিন রক্ত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন বি ১২

খাসির মাংস ভিটামিনের একটি ভাল উৎস। ভিটামিন বি ১২ স্নায়ুতন্ত্রের এবং সুস্থ রক্ত কোষের সঠিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন বি ১২ এর উপকারিতা

স্নায়ুতন্ত্র - ভিটামিন বি ১২ দত্তের সঠিক কার্যকরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রক্ত কোষ - ভিটামিন বি ১২ সুস্থ রক্ত কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

শক্তি - ভিটামিন বি ১২ শরীরের শক্তি উৎপাদনের সাহায্য করে।

ডিএনএ - ভিটামিন বি ১২ ডিএনএ তৈরি ও মেরামতের জন্য প্রয়োজন।

জিংক এবং সেলেনিয়াম

খাসির মাংস রয়েছে জিংক ও সেলেনিয়াম। জিংক ইউনিয়ন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে অন্যদিকে সেলেনিয়াম একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি রোধ করে।

ইমিউন সিস্টেম - জিংক আমাদের ইনিয়ন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

ক্ষত নিরাময় - জিংক ক্ষত নিরাময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

প্রজনন স্বাস্থ্য - জিংক শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

থাইরয়েড স্বাস্থ্য - সেলেনিয়াম থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যকারী তার জন্য জরুরী।

ক্যান্সার প্রতিরোধ - সেলেনিয়াম কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য -
সেলেনিয়াম হৃদ রোগের রোগী কমাতে সাহায্য করে।

খাসির মাংসের অপকারিতা

অতিরিক্ত মাত্রায় বা প্রতিদিন নিয়ম করে খাসির মাংস খেলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি দেখা দিতে পারে। খাসির মাংসের রয়েছে সাচুরেটেড ফ্যাট। যা মানব দেহের রক্তে কোলেস্টের মাত্রা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে LDL (খারাপ) কোলেস্টেরল। অতিরিক্ত LDL কোলেস্টরল হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। চলুন অতিরিক্ত খাসির মাংস খেলে কি সমস্যা দেখা দিতে পারে সে এবং অপকারিতা সর্ম্পেকে জানি ,

স্যাচুরেটেড ফ্যাটের প্রভাব

হৃদরোগ - স্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগে ঝুঁকি বাড়ায়।

কোলেস্টেরল - স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে LDL কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়ায়।

ওজন বৃদ্ধি - স্যাচুরেটেড ফ্যাট ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়।

ক্যান্সারের ঝুঁকি

গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাতকৃত লাল মাংস দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। খাসির মাংস লাল মাংসের একটি ধরন।

হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইন (HCAs) - উচ্চ তাপমাত্রায় লাল মাংস রান্না করলে HCAs তৈরি হতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ।

পলিসাইক্লিক আরোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAHs) - ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে লাল মাংস রান্না করলে PAHs তৈরি হতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি

খাসির মাংস নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগে ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ খাসির মাংসের রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল।

উচ্চ রক্তচাপ - খাসির মাংসের স্যাচুরেটেড ফ্যাট উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।

কোলেস্টেরল - খাসির মাংস থাকা কোলেস্টেরল রক্তনালীতে জমা হতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ট্রাইগ্লিসারাইড - খাসির মাংস জাতীয় স্যাচুরেটেড ফ্যাট ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়াতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

লেখকের মন্তব্য

মাংস প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ এর ভালো উৎস।শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য অবশ্যই মাংস খাওয়া প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় নয়। অতিরিক্ত মাংস খেলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে তা আমরা উপরে আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানলাম। তাই যেকোনো খাদ্য খাবার আগে উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url