পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায়
ভূমিকা
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ালেখা করা একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। পড়ালেখা না করলে কখনো জ্ঞানী হওয়া যায় না এবং ভালো রেজাল্ট করাও সম্ভব হয় না। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করা ছাড়া বিকল্প নেই। পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। এর আগে আমাদের জানতে হবে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার কারণ, কেন এমন হয়?মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন কিছু বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিই;
.
১. শারীরিক কারণে
- পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া কিংবা ফাস্টফুড বেশি খাওয়া যায় শরীরে অবসাদ তৈরি করে। শরীর সুস্থ না থাকলে মন ও খারাপ থাকে যার কারণে মনোযোগী হওয়া যায় না। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে সারাদিন ক্লান্তি এবং ঝিমুনি ভাব থাকে। যা যে কোন কাজে অমনোযোগী হওয়ার প্রধান কারণ।
- খেলাধুলা বা শারীরিক ব্যায়াম না করা এবং একেবারে নিজের জন্য সামান্য সময় না রাখা এতে মানসিক প্রশান্তি বিঘ্নিত হতে পারে।
- কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, রক্তশূন্যতা, স্লিপ এপনিয়া ইত্যাদি কারণে মনঃসংযোগে ঘাটতি, অবসাদ, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
- সময়ের অব্যবস্থাপনা
- নির্দিষ্ট কাজের রুটিন না থাকা
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি ব্যস্ততা
- কাজের মধ্যে হঠাৎ দিব স্বপ্নে বুঁধ হয়ে যাওয়া
- নিজের কাজকে অপছন্দ করা
- পড়ার বা কাজের পরিবেশ না থাকা
- ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সহজে কাউকে না বলতে না পারা।
চলুন এইবার পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার কয়েকটি স্মার্ট উপায় সম্পর্কে জেনে নিই।
পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায়
সঠিক স্থান নির্বাচন করা
পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে সঠিক স্থান বচন করতে হবে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রত্যেকের নিজ নিজ পছন্দের উপর। অনেকে আছে যারা নিরিবিলি পরিবেশে পড়ালেখায় মনোযোগ বেশি দিতে পারে, কোলাহল যুক্ত পরিবেশে মনোযোগ দিতে পারেনা। আবার অনেকে আছে কোলহল যুক্ত
আরো পড়ুনঃ যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন
এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে। এছাড়া পড়ার স্থান গুছিয়ে রাখাও জরুরী। কারণ পড়ার যদি এলোমেলো থাকে তাহলে এটি দৃষ্টিকটু দেখায় কিছুক্ষণ পর মন ও অস্থির হয়ে ওঠে। সেজন্য পড়তে বসার আগে যা যা লাগবে তা হাতে নাগালের মধ্যে পরিপাটি করে রাখতে হবে। পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন একই স্থানে পড়তে বসছে মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে পড়ার মনোভাব তৈরি করে। পড়তে বসার স্থানে বসে খাওয়া দাওয়া না করা কিংবা বিশ্রাম আড্ডা না দেওয়ায় ভালো।
বাস্তবসম্মত লক্ষণ নির্ধারণ করা
আমাদের মধ্যে দেখা যায় আমরা অনেক সময় অতি উৎসাহে বড় বড় পরিকল্পনা করে ফেলি, পূরণ করতে না পারলে আফসোস করি। এতে তো মনোবল বাড়েই না বরং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আগের থেকে আরও অনেক কমে যায়। সেজন্য শুরুর দিকে কঠিন পদক্ষেপ না নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় আপনার লক্ষ্য যদি কয়েকটি খন্ডে ভাগ করা যায়। যার ফলে ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য পূরণ করা সহজ হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনার ইংরেজি পরীক্ষায় ৯০ নম্বর পাওয়াই আপনার প্রধান লক্ষ্য। এর জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্ধেক পাঠ্যপুস্তক পড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক অগ্রাধিকার দেওয়া
পড়তে বসার আগে বিষয় অনুযায়ী তালিকা তৈরি করতে হবে। এতে কোনটি আগে এবং কোনটি পরে পড়তে হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ পড়ার বিষয়গুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে এটা আরো কার্যক্রম হবে সময় কাজে লাগাতে। বিষয়ভিত্তিক পড়লে পড়ার সহজতর হয়। প্রথমে কি করা
উচিত সে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে আপনি লক্ষ অনুযায়ী কোনটি ডেড লাইন আগে সেটি দেখতে পারেন। এভাবে ক্লাস টাস্ক থেকে কোর্সওয়ার্ক সম্পূর্ণ করতে গুগল ক্যালেন্ডার, ক্লিকআপের মতো অ্যাপ আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
বিরতি নিয়ে পড়া
একটানা অনেকক্ষণ পড়তে থাকলে পড়ার মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হয়। এর জন্য কিছুক্ষণ পরপর বিরতি নিলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং পড়া মনে থাকে। তাই ২৫ মিনিট পরপর ৫-১০ মিনিটের জন্য ছোট বিরতি নিয়ে পড়লে পড়ার মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। যা চোখে সুরক্ষার জন্য উপকারী। এইভাবে চারবার পুনরাবৃত্তি করুন। তারপর একটি দীর্ঘ বিরতি নিন। বিরতিতে মেডিটেশন, ব্যায়াম, হালকা ঘুম কিংবা হাটাহাটি করতে পারেন। এরকম অনেক কৌশল রয়েছে। আপনার জন্য উপকারী আপনি সেটা করতে পারেন।
কিছু কৌশল মেনে চলা
পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখতে কিছু কৌশল এবং কিছু স্মার্ট অভ্যাস মেনে চললে দ্রুত পড়া মনে থাকে। এর জন্য আপনি আলাদা অধ্যায় বা বিষয়ের জন্য আলাদা রঙের ফ্লাশ কার্ড তৈরি করে নিজের ভাষায় সংক্ষিপ্ত তথ্য লিখে রাখতে পারেন। আবার পড়া অন্য কাউকে বুঝিয়ে দিলে সেটি আরো ভালোভাবে গেঁথে যাই। বড় তথ্য ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনরায় পড়ার মাধ্যমে মনোযোগ ধরে রাখা যায়।
ফোন থেকে দূরে থাকা
পড়ার সময় ধরে রাখার প্রধান শত্রু হচ্ছে হাতে থাকা ফোন। ফোন এই কারণে পড়াই মনোযোগ নষ্ট হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নোটিফিকেশন বা বন্ধুদের বার্তা মনোযোগ নষ্ট হওয়ার মূল কারণ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে, একজন সাধারন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার কারিগরে প্রতিদিন ২ ঘন্টা ৫০ মিনিট আপ স্ক্রল করে ব্যয় করে। অথচ আমরা এই সময়টুকু পড়ার তাই করতে চাই না। তাই পড়ার সময় এমন এক ব্যবহার করুন যাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফোন নিজে থেকেই বন্ধ থাকে।
নিজেকে পুরস্কার দেওয়া
প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের পর কোন কিছু উপহার পেলে অনেক গুন বেড়ে যায়। তাই কিছু কিছু সময় আনন্দ পাওয়ার জন্য পড়াই মনোযোগ ধরে রাখতে পারলে সেটা তো মন্দ নয়। পুরস্কার ছোট বড় যেমনই হোক সেটা লাভ করার আনন্দটা অনেক। তাই লক্ষ্য অর্জনের পর নিজেকে নিজে পুরস্কৃত করুন। দেখবেন যেকোনো কাজ করার আগ্রহ অনেক বেড়ে যাবে।
লেখকের মন্তব্য
আমরা উপরে আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে জানলাম। উপরের কৌশল গুলো অনুসরণ করলে আশা করা যায় মনোযোগ বৃদ্ধি হবে। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন।
https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html
comment url