পিত্তথলিতে পাথর হলে কি কি সমস্যা হয়

পিত্তথলির পাথর হলো ছোট ছোট বালু দানার মত উপরে মটর দানা বা তার থেকে বেশি শক্ত দানাদার বস্তু, যা বিভিন্ন আফ্রিদি ও বিভিন্ন রঙের হতে পারে। এটি নির্ভর করে পাথরটি কি পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় তার ওপর। পিত্তথলিতে পাথর হলে অনেক রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে আবার কোন লক্ষণ প্রকাশ না ও হতে

পারে। পিত্তথলিতে পাথর হলে কি কি সমস্যা হয়, পিত্তথলিতে পাথর হলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে, এর চিকিৎসা কি সে সম্পর্কে আমরা জানবো। এর জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভূমিকা 

আমাদের অনেকের মধ্যে পিত্তথলিতে পাথরের সমস্যা দেখা যায়। পিত্তথলিতে পাথর বিভিন্ন কারণে হতে পারে।উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায় বেশ কয়েক ভাবে।

পিত্তথলির কার্যপ্রক্রিয়া

যকৃত লিভার পিত্তরস বা বাইল তৈরি হয় এবং ছোট নালীর মাধ্যমে এই রস পিত্তথলিতে জমা হয়। মানুষ যখন চর্বি জাতীয় খাবার খায় তখন কোলসিস্টোবাইনিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনের প্রভাবে পিত্তথলি সংকুচিত হয় এবং জমা থাকার রস বের করে দেয়। তারপর এই রস ক্ষুদ্রান্তে গিয়ে খাদ্য হজমে সাহায্য করে।

পিত্তথলিতে পাথর আসলে কি

পিত্তথলিত পাথর হল বিভিন্ন রং এর ও বিভিন্ন আকৃতির ছোট ছোট দানা থেকে শুরু করে মোটরের দানা বা তার চেয়ে বড়, শক্ত দানাদার বস্তু। ক্যালসিয়াম বা বিলিরুবিন ,কোলেস্টেরল ইত্যাদি পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি এই পাথরগুলো পিত্তরসের সঙ্গে মিশানো অবস্থায় থাকে এবং এগুলো হালকা বাদামী, ময়লাটে সাদা
 
বা কালো রঙের হতে পারে। এটি মানবদেহে পেটের ডান দিকে যকৃতের পেছনে ও তলার দিকে পিত্তথলি থাকে। একটু হলে প্রধান কাজ হচ্ছে পিত্তরস তৈরি করা। পিত্ত রস খাবার হজমে বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে। নানারকম কারণে পিত্তথলিতে বিভিন্ন পদার্থ জমে পাথরের সৃষ্টি করে।

 পিত্তথলির পাথর কেন হয়

পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে কোন কারনে পিত্তরস ঘন হলেই পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি বেড়ে যায়। এছাড়া শরীরের চর্বি জমলে, রক্ত বেশি ভাঙ্গলে, পানি কম খেলে পিত্তথলিতে পাথর জমতে পারে। লিভার থেকে তৈরি পিত্ত রস বা বাইল পিত্তথলি জমা রাখে এবং চর্বি 

জাতীয় খাবার খেলে হজমের পিত্তরস পিত্তথলি থেকে বেরিয়ে আমাদের খাদ্যনালীতে আসে এবং হজমের সহায়তা করে। পিত্তরস হলুদ রঙের তরল পদার্থ।এর মধ্যে রয়েছে কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম, লবন, অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। এই পিত্তরসের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয় পিত্তথলির পাথর।

আরো পড়ুনঃ  লিভারের চর্বি কমানোর উপায় কি

 পিক তোলার পদার্থ যার মধ্যে কিছু কঠিন পদার্থ থাকে। তরল পদার্থের পরিমাণ কমে গিয়ে যদি কঠিন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে পাথর হতে পারে। এবং কোন কারণে যদি পিত্তথলি সংকোচন অপসারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাহলেও পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। মেডিকেল সাইন্স এর মতে পাঁচটি

 এফ থাকলে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এগুলো হলো ফ্যাট, ফিমেল, ফেয়ার, ফার্টাইল আর ফোরটি। মানে চল্লিশোর্ধ্ব ফর্সা, স্বাস্থ্যবান নারী ও যাদের বাচ্চা আছে তাদের পিত্তপাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া যারা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায়, ভেজাল ভেজাল খাবার খায়, লিভার রোগে আক্রান্ত তাদের পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পিত্তথলিতে পাথর হলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে

পিত্তথলিতে পাথর জমলে বা সমস্যা হলে বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে এগুলো হলো;

  • পেটের পেছনের দিকে, কাঁধে, পেটের মাঝ বরাবর এমনকি বুকের ভেতর ও ধীরে ধীরে ব্যথা ছড়িয়ে পরতে পারে। সেই সাথে হালকা জ্বর, বমি ভাব বা বমি দেখা দিতে পারে।
  • পিত্তথলিতে পাথর হলে এতে প্রদাহ হয়, যাকে কোলেসিস্টাইটিস বলে। এমন অবস্থায় পেটের ডান দিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
  • অনেক সময় তোর পিত্তথলি থেকে বেরোতে গিয়ে পিত্তনালিতে আটকে যায় এবং তখন বিলুরুবিনের বিপাক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে জন্ডিস ও হতে পারে।
  • রোগ নির্ণয়ের জন্য এই উপসর্গের পাশাপাশি পেটের আলট্রানোগ্রাম প্রয়োজন। অবস্থান জানতে বা প্রয়োজনে বের করতে ইআরসিপি জাতীয় পরীক্ষা করা যেতে পারে।
  • পেটের আলসার যকৃতের কোনো সমস্যা এমনকি হৃদরোগেও এ উপসর্গের কাছাকাছি ধরনের ব্যথা হতে পারে বলে সেগুলোর অবস্থান নির্ণয় করে নেওয়া দরকার।

কাদের রোগটি বেশি হয়

ওজনাধিক্য ও স্থূল ব্যক্তিদের পিতা থলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের পাথরের প্রবণতা বেশি থাকে। এছাড়া চল্লিশোর্ধ্ব বয়স জন্মনিয়ন্ত্রণ বরি খাবার অভ্যাস, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

চিকিৎসা

প্রদাহ ও তীব্র ব্যথার সময় কোনো অস্ত্রোপচার করা হয় না। এর জন্য সাধারণত কয়েক দিনের জন্য মুখে খাদ্য গ্রহণ বন্ধ সালাইন অ্যান্টিবায়োটিক ও বাথানাশক ওষুধ দিয়ে প্রাথমিক উপশমের করতে হয়। পিত্তথলির অস্ত্রোপচার দুইভাবে করা যায়। একটি হচ্ছে পেট কেটে আরেকটি হচ্ছে ফুটো করে বা ল্যাপরোস্কোপির মাধ্যমে। পিত্তথলিতে পাথর আটকে গেলে ইআরসিপি যন্ত্রের সাহায্যে পাথর বের করা যায়।

অস্ত্রপচার চিকিৎসা -
উপসর্গযুক্ত পিত্তথলি ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গলব্লান্ডার অপসারণের সুপারিশ করতে পারেন। এই সার্জারি যাকে বলা হয় কোলেসিস্টেক্টমি, ঐতিহ্য গত ওপেন পদ্ধতি বা সর্বশেষ 'গোল্ড-স্ট্যান্ডার্ড ' ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতির মাধ্যমে করা যেতে পারে।

কোলেস্টেরল গলস্টোন দ্রবীভূত করার জন্য দুই ধরনের অ-সার্জিক্যাল বা অনাক্রম্য চিকিৎসার বিকল্প ব্যবহার করা যেতে পারে;

১.ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেক্টমিতে - একটি ছোট ভিডিও ক্যামেরার সাহায্যে পেটের একটি ছোট গলব্লাডার অপসারণ করা হয়। পুনরুদ্ধার দ্রুত হয় এবং রোগকে পরের দিন ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা জগতের লেপারস্কোপিক পদ্ধতি খুবই সুবিধাজনক।পিতথলে অবস্থিত সেখানে ছোট ছোট ছিদ্র করে সূক্ষ্ণ সরু যন্ত্র দিয়ে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়।  

২.খোলা কোলেসিস্টেক্টমি - ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেক্টমি সম্ভব না হলে সঞ্চালিত হয়। ওপেন সার্জারি ফলে বেশি ব্যথা হয় এবং হাসপাতালে পুনরুদ্ধারের সময় প্রায় ১ সপ্তাহ।

লেখকের মন্তব্য

শরীরে যে কোন রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজে নিজে ওষুধ খেলে বিপরীত হতে পারে। নিজের অজান্তে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। উপরে আর্টিকেলটি মাধ্যমে আমরা পিত্তথলিতে পাথর হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে জানলাম এবং এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানলাম। তাই এই লক্ষণগুলো যদি কারো ওর মধ্যে দেখা যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসা করাতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url