ওজন কমানোর উপায় ডায়েট
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত কিভাবে ওজন কমাবেন? তা নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছেন। তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন তাহলে ওজন কমানো গোপন
রহস্য গুলো জানতে পারবেন। ডায়েট ছাড়া ওজন কমানো সম্ভব অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ সম্ভব। আপনি যদি নিয়মিত কিছু নিয়ম ফলো করে চলুন তাহলে ডায়েট ছাড়া ওজন কমানো সম্ভব।
.
ভূমিকা
অনেক সময় শরীর চর্চার মাধ্যমে কমানো যায় কিন্তু শুধু শরীরচর্চায় নয় বরং কিছু সাধারন নিয়ম মেনে আপনি খুব সহজে ওজন কমাতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ডায়েট ছাড়া ওজন কমানো সম্ভব।
ডায়েট ছাড়াই ওজন কমানোর উপায়
রাতের খাবার খাওয়া
আমাদের অনেকের মাঝে ভুল ধরানো রয়েছে যে রাতের খাবার না খেলে হয়তো বা শরীরের ওজন কমবে। কিন্তু যা একেবারেই ভুল ধারণা। রাতের খাবার না খেলে আমাদের শরীরের মধ্যে যে রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো ঘটে সেগুলো রাতের খাবার না খেলে সঠিকভাবে বিক্রিয়া গুলো সম্পূর্ণ হতে পারে না। যার
ফলে আমাদের শরীর দুর্বলতা অনুভব করে। রাতের খাবার একটু নিয়মের মধ্যে খাওয়া উচিত। যেমন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা আগে খাবার খেতে হবে। তবে ভারী খাবার রাতের বেলায় খাওয়া ঠিক নয়।
আরো পড়ুনঃ সজনে পাতার উপকারিতা কি
খাওয়ার কিছুক্ষণ পর 10 থেকে 15 মিনিট হাঁটার অভ্যাস
আমাদের মধ্যে অনেকের একটি সমস্যা রয়েছে আমরা খাবার পর একটু বিশ্রাম নিতে পছন্দ করি। কিন্তু খাওয়ার পরপরই শুয়ে বা বসে বিশ্রাম নেওয়া ঠিক নয়।খাবার খাওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যারা জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করার সময় পান না তারা নিয়মিত এই কাজটি করতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের মেটাবোলিজম বৃদ্ধি পেতে সহায়তা হবে। একই সঙ্গে পরের ফলে বাড়িতে মে দিলে জমতে পারবে না। ওজন ও কন্ট্রোলের মধ্যে থাকবে।
হালকা গরম পানি পান
ওজন কমানোর জন্য লেবু গরম পানি মধুর উপকারিতা আমরা অনেকেই জানি কিন্তু শুধু হালকা গরম পানি পান করেও কমানো সম্ভব যা আমাদের অনেকের অজানা। গরম পানি শরীরে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গরম পানি অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের ফলে শরীরে যে বাড়তি মেড জমা হয় তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
8 থেকে 12 ঘন্টা ঘুমানো নিশ্চিত করুন
ওজন কমানোর একটি কার্যকারী উপায় হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম। যদিও এতে একটু অবাক হতে পারেন তবে এটি প্রমাণিত। গবেষণা দেখা গেছে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। ফলে ওজনও বাড়তে পারে। তাই নিয়মিত আট ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করুন। এতে আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
স্বাস্থ্য কর ঘরের খাবার খাওয়া
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই তিনবেলা খাবার খেতে হবে। রাতের বা সকালের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। শরীরের নিয়মিত হজম প্রক্রিয়া কিছুটা বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। সে জন্য ডায়েটে সকাল, দুপুর ও রাতে ঘরে খাবার খান। এতে আপনার ডাইজেস্ট প্রক্রিয়া যেমন ভাল থাকবে তেমনি শরীরের ওজন কমাতেও সহায়তা করবে।
মৌসুমী ফল খাওয়া
দৈনিক খাদ্য তালিকায় মৌসুমীর ফল বেশি বেশি রাখুন বাদাম, ফল, কুমড়ার বীজ ,মধু দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। তাই ফল বারবার খেয়ে ওজন বাড়ার হাত থেকে পাবেন সহজেই মুক্তি।
আরো পড়ুনঃ পেঁপে উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা
ওজন কমানোর কিছু খাবারের তালিকা:
ফল
- কলা
- পেঁপে
- আপেল
- জাম্বুরা
- আঙ্গুর
- বেরি
শাকসবজি
- লাউ
- ঝিঙ্গা
- শসা
- গাজর
- পালং শাক
- ব্রকলি
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
মাংস
- মুরগির মাংস
- গরুর (মাংস চর্বি কম জাতীয়)
- খাসির মাংস
মাছ
- রুই
- কাতলা
- মৃগেল
- তেলাপিয়া
অন্যান্য
- ডাল
- ডিম
- বাদাম
- দই
- টক দই
- বাদাম
- ওটমিল
- বাদামি চাল
উপরের খাদ্যগুলোর সবগুলোই পরিমিত পরিমানে খেতে হবে। কোন কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবেনা। অতিরিক্ত ওজন ত্বক ও শরীরের অনেক ক্ষতি করে। স্বাস্থ্য সমস্যা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেই। আপনার ওজনের উপর নির্ভর করে আপনার প্রতিদিন কত ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত তা নির্ধারণ করতে হবে। শুধু
ওজন অনুযায়ী খাবার র্চাট অনুসরণ করলে হবে না আপনার শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় অধিক খাবার গ্রহণ করলে এই র্চাট কোন কাজে আসবে না বা ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না।
মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর গোপন রহস্য
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে মাসে ১০ থেকে ২০ কেজি ওজন কমানোর কি সম্ভব? উত্তর হ্যাঁ সম্ভব। আপনি যদি সঠিক নিয়মে ডায়েট করতে পারেন তাহলে এটি সম্ভব আপনাকে কঠোর ইচ্ছা শক্তি ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। সর্বোচ্চ পরিমাণে ধৈর্যধারণ এবং মানসিক শক্তি অটুট থাকা
লাগবে। কারণ এ ওজন কমানোর খাবার তালিকা অনুসরণ করে আপনাকে দৈনন্দিন স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ কম খাবার খেতে হবে। তবে এই ওজন কমানো খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে গিয়ে যদি আপনার শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে আপনি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা তৈরি করবেন।
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। সকালের আবহাওয়ায় কিছু স্বাস্থ্যকর উপাদান। যেমন সকলের রোদে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যার শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
৩০ দিনে ওজন কমানোর উপায়
মধু লেবু পানি
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে প্রথমে যা করা লাগবে তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস মধু দিয়ে লেবু পানি দিয়ে পান করতে হবে। পানিটি যদি হালকা গরম হয় তাহলে আরো ভালো হয়। একটি মাঝারি সাইজের লেবুর অর্ধেক রস এক গ্লাসের পানির মধ্যে দেবেন সাথে এক চা চামচ মধু দিয়ে
ভালো মতো মিশিয়ে নিবেন। আপনি আরো একটি কাজ করতে পারেন সেটা হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি বা জগিং করে তারপর এসে লেবু মধু পানির মিশ্রণটি খেতে পারেন। এইতো বেশ ভালো উপকার পাবেন।
সকালের নাস্তা
সকালের নাস্তা একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে। সকাল ৮ তার মধ্যেই আপনাকে আপনার সকালের নাস্তা সেরে ফেলতে হবে। সকালের নাস্তা হিসেবে রাখতে পারেন একটি সবুজ আপেল অথবা দুটি ছোট সাইজের কলা অথবা কমলা। এর সাথে আপনি এক চামচ চিয়া সিড এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে
খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে পারেন। সপ্তাহেদুইদিন একটা পাতলা রুটি অথবা চিনি ছাড়া বাখরখানি সাথে একটি কলা এবং বাকি ৪ এসব খাবেন। বাকি একদিন ডিম অথবা গ্লাস দুধ চিনি ছাড়া খেতে পারেন।
সকালের হালকা খাবার
সকালে নাস্তার পর ১০/১১ টায় অল্প তেলে রান্না করা নানা পদ মেশানো শাকসবজি বড় কাপের এক কাপ পরিমাণ খাবেন। সপ্তাহে দুইদিন ছোট সুপ খাওয়ার একটা বাটিতে এক বাটি ডাল খাবেন। বেশি ক্ষুধা লাগলে সবজি বা ডালের সাথে ও অল্প পরিমাণে কিছু মুড়ি মিশিয়ে খেতে পারেন। অথবা ৩-৪ টেবিল
চামচ ওটমিল কিসমিস বা খেজুর দিয়ে খেতে পারেন। বাড়াতে ঘুমানোর আগে আপনি দুই তিনটা খেজুর বা ২০ থেকে ২৫ টা কিসমিস ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এবং এই সময় খেতে পারেন।
দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবারও তাড়াতাড়ি খাবার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এজন্য সঠিক সময় হচ্ছে ১২টা থেকে ২টা। এই সময়ের মধ্যে আপনার দুপুরের খেতে ফেলতে হবে। দুপুরে মাঝারি সাইজের বাটির এক বাটি শাক সবজির সাথে ডাল মিশিয়ে খেতে হবে। মিক্সড সবজিতে দেহের সব ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন
ও মিনারেল রয়েছে। সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। যা হজমের সহায়তা করে এবং শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে গ্লুকোজের রূপান্তরিত করে। সবজি রান্না করার ক্ষেত্রে খুব সামান্য পরিমাণে তেল ব্যবহার করতে হবে ভেজে রান্না করবেন না সবজি পুরোপুরি সিদ্ধ করবেন না। আধা সিদ্ধ
সবজিতে পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। শাক সবজির মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাঁজর, শষা, শিম, পটল, করলা, শালগম, পালং শাক, পুঁই শাক, লাউ শাক, পেঁপে ইত্যাদি ওজন কমানোর খাবার হিসেবে অনেক উপকারী। অধিক ক্ষুদা লাগলে সপ্তাহে দুইদিন ১কাপ করে ভাত খাওয়া যাবে। সপ্তাহে ১-২ দিন মুরগির
মাংস খেতে হবে। অতিরিক্ত তেলযুক্ত মাছ খাবেন না। বড় মাছ খেলে এক পিস সবজির সাথে খেতে পারেন। সবজি দিয়ে মাছের তরকারি বা শাক দিয়ে মাছের তরকারি খুব উপাদেয়। এছাড়া সপ্তাহে ১-২ দিন মুরগির মাংস খেতে হবে।তবে শুধুমাত্র মুরগির বুকের মাংস।
বিকেলের নাস্তা
বিকেল ৪/৫ টায় আধা মুঠ ভেজানো ছোলা অথবা একটি কলা খাবেন। সকালে কলা খেলে বিকেলে অন্য কিছু খাবেন। মেয়েরা এক মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চাট অনুসরণ করার সময় করেন পিরিয়ডের সময় দুই তিনটা কলা অবশ্যই খাবেন। কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যা পিরিয়ডের সময় বেশি প্রয়োজন। শরীর বেশি দুর্বল হলে ডায়েট করা বাদ দিবেন।
রাতের খাবার
সন্ধ্যা সাতটায় এক গ্লাস লেবু পানি সকালে বাকি অর্ধেক লেবুর রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন। অথবা আপনি ফোন ব্যায়াম করে রাত ৮ টার দিকে খেতে পারেন। এই ৩০ মিনিট পর রাতের খাবারে আবার সবজি খাবেন। এক কাপ পরিমাণ সবজি অথবা শাক রান্না করে খেতে হবে লাগলে সাথে দুই মুড়ি খেতে পারেন ঘুমিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন অবশ্যই রাতের খাবার খাওয়ার তিন ঘন্টা পর ঘুমাতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
আপনাকে সারা দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। আপনার শরীরে ধরন অনুযায়ী চার থেকে পাঁচ লিটার পর্যন্ত পানি খেতে পারেন। যদি এত বেশি খেতে না পারেন তাহলে একটু কম খেতে পারেন।
বাদাম
বাদাম খাওয়া অনেক আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। সারাদিনে ৪/৫ টা কাঠ বাদাম ও ৪/৫ টা কাজু বাদাম খেতে হবে থেকে ৩৫টি চীনাবাদাম খেতে পারেন করে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডায়েট চার্ট অনুসরণের পাশাপাশি আপনাকে সকাল সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতে হবে ওজন কমানোর রুটিন চলাকালীন ওজন বাহি বা ওয়েট লিফটিং যাবে না। আপনি ফ্রি হ্যান্ড এবং কার্ডিও ব্যায়াম করতে পারেন।
বি:দ্র:- আপনি যদি এই খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে চান অনুসরণ করতে পারেন যেহেতু সবার হেলথ কন্ডিশন এক নয় সেহেতু এই খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে গিয়ে আপনার যদি শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী নয়।
ডায়েটে থাকাকালীন সতর্কতা
- মিষ্টি জাতীয় কোন খাবার খাওয়া যাবে না শতভাগ এড়িয়ে চলতে হবে।
- তেলে চুবিয়ে খাবার খাওয়া যাবেনা হোক সেটা বাসায় বানানো বা অন্য জায়গায়।
- প্রাকৃতিক খাবার ছাড়া বাইরের তৈরি করা খাবার খাওয়া যাবে না।
- আগে কখনো ডায়েট চার্ট ফলো না করে থাকলে এই রুটিন অনুসরণ না করাই ভালো আপনি শুরুতে ধীরে ধীরে খাবার কমিয়ে এটাকে শেষ লক্ষ্য হিসেবে রাখুন।
আশা করি ৩০ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
মন্তব্য
আশা করি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ওজন কমানোর উপায় ডায়েট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরকম নিয়মিত আর তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html
comment url