চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিডকে স্বাস্থ্যের ভাষায় সুপারফুড হয়। চিয়া সিড সাদা ও কালো রঙের তিলের ন্যায় ছোট আকারের এক প্রকার বীজ। চিয়া সিড বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা , চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ওয়েব সাইটির সাথেই থাকুন।
.
চিয়া সিড কি
মূলত চিয়া সিড হচ্ছে একটি গাছের বীজ। এটি একটি শস্য জাতীয় উদ্ভিদ। চিয়া হচ্ছে সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ। যা মরুভূমি অঞ্চলে বেশি জন্মায়। চিয়া সিড ছোট দান আকৃতির, অনেকটা তিলের দানার মত দেখতে। গবেষণা জানা যায় প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির প্রধান
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে মেথি খাওয়ার উপকারিতা
খাদ্য তালিকায় রাখা হতো। মেক্সিকো ও আমেরিকা এই গাছ চিয়া নামে পরিচিত। আর এজন্যই এই গাছের বীজ চিয়া সিড বলা হয়। চিয়া সিডের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ দুধ ও ডিমের চেয়ে বেশি।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া যায় আবার অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পানিতে ভিজে খাওয়ার জন্য রাতে এক গ্লাস পানিতে কিছু পরিমাণ চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সকাল বেলায় সেটি খেয়ে ফেলুন। আবার কেউ যদি কোন কারণে রাতে ভিজিয়ে
রাখতে না পারেন তাহলে চিন্তার কারণ নেই এটি খাওয়ার দশ থেকে বিশ মিনিট আগে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারবেন। আবার চাইলে পুডিং, জুস, ওটস,সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। আবার সিরিয়াল, রান্না করা সবজি বা সালাদের কিছুটা পরিমাণ চিয়া সিড ছড়িয়ে খেতে পারেন। এছাড়া আরো বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে চিয়া সিড ব্যবহার হয়।
আরো পড়ুনঃ পেঁপে উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
চিয়া সিড খাওয়া পরিমাণ
প্রতিদিন নিয়মিত ১ থেকে ১.৫০ টেবিল চা চামচ চিয়া সিড খাওয়া উচিত। এই পরিমানই পুষ্টি আমাদের শরীরের প্রয়োজন। কারণ এতে যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, জিংক, ফাইবার এবং ফসফরাস নানা ধরনের রয়েছে যা আমাদের শরীরে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এর থেকে বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়া ঠিক না। অতিরিক্ত পরিমাণে জিও সিট খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও রোগবালায় সৃষ্টি হতে পারে।
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর। চিয়া সিডের উপকারিতা অনেক। চিয়া সিডে কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুন বেশি ওমেগা-৩, দুধের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুন বেশি আয়ন, ডিমের থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও চিয়া সিডে আরো রয়েছে কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় চিয়া সিডে। চিয়া সিডে যেমন অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় তেমনি অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে কিছু অপকারিতাও দেখা যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক। চলুন চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জানি-
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে , যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
- চিয়া সিড কোলন পরিষ্কার রাখে। যার ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
- চিয়া সিড পেটের গ্যাসটির সমস্যা বা প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে।
- চিয়া সিড হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড হৃদ রোগে ঝুঁকি কমাতে ও ক্ষতিকর খারাপ কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে।
- পুষ্টিবিদদের মতে চিয়া সিডে স্যামন মাছের যে আট গুণ বেশি পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
- চিয়া সিড মানব শরীরের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে।
- চিয়া সিড ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
- ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাতে সাহায্য করে।
- চুল স্টক ও নখ সুন্দর রাখতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- এটি শরীর থেকে টক্সিন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে। ফলে করুন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
- চিয়া সিডে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড হচ্ছে শরীরের বেশি বৃদ্ধি ক্ষতি মেরামত পুনরুদ্ধারের জন্য একটি অপরিহার্য প্রোটিনের উপাদান।
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার শরীরকে শক্তিশালী করে।
- চিয়া সিড খাবারের আগ্রহ কমিয়ে দেয় ক্ষুধা নিবারণ করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড ক্লান্তি দূর করতে স্ট্যামিনা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- চিয়া সিড ঘুম ভালো হতো সাহায্য করে।
- চিয়া সিড অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার দূর করতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড চুল, ত্বক ও নখ সুন্দর রাখতেও সাহায্য করে।
- চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
- এটি শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
- এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড বদহজম থেকে বাঁচায় এবং সঠিকভাবে হজম প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করে।
- এই বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরের শিথিল করার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা
চিয়া সিড বাচ্চাদের জন্য ভীষণ উপকারী। বাচ্চাদের ব্রেন বিকাশে সাহায্য কর। চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বাচ্চাদের ব্রেনের বিকাশে এবং বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। চিয়া সিডে ফাইবার সলিউবল রয়েছে যা শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে । জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় পেশি গঠনের সাহায্য করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায় ডায়েট
চিয়া সিড এর অপকারিতা
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। চিয়া সিড এর অপকারিতা গুলো জানা যাক,
- চিয়া সিড অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
- পরিমাণের থেকে বেশি খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। যার ফলে বিভিন্ন রোগবালাই সৃষ্টি হতে পারে।
- গবেষণায় দেখা গেছে চিয়া সিড প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন্য ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই চিয়া সিড কোনোভাবে হবে বেশি খাওয়া যাবেনা। তাই সীমিত পরিমানেই সিয়া সিড খাওয়া ভালো।
- চিয়া সিড যেহেতু দেহের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে তাই পরিমাণ মতো না খেলে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- যাদের অ্যালার্জি তাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। চিয়া সিড বেশি পরামাণে খেলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চিয়া সিড বেশি পরিমাণে খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বা অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। চিয়া সিডে থাকা ফাইবারের জন্য যেহেতু নিয়মিত খেলে শরীরের ওজন কমে যায়, অনেক সময় অতিরিক্ত ওজন কমে
যাওয়ার কারনে দুর্বলতা অনুভব করে ও কাজ করার ক্ষমতা হারায় । চিয়া সিড অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে গ্যাস্টিক, পেট ব্যথা, হজম, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেহের শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আসল চিয়া সিড চেনার উপায়
আসল চিয়া সিড চেনার উপায় হচ্ছে ভালোভাবে দেখে পর্যবেক্ষণ করে নিতে। চিয়া সিড সবসময় ঝরঝরে এবং ফ্রেশ থাকে। একটি ডানার সাথে কখনো আরেকটি দানা লেগে থাকবে না। এর সাথে বালি বা অন্য কোন মিশ্রণ থাকবে না এবং পচা বা বাসি গন্ধ করবে না। সাদা চিয়া সিডের তুলনায় কালো চিয়া সিডের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকায় এর দাম তুলনামূলক একটু বেশি। এভাবে আসল চিয়া সিড চিনতে পারবেন।
চিয়া সিড কারা খেতে পারবে না
চিয়া সিড সবার জন্য খাওয়া ঠিক নয়। যাদের নিম্ন রক্তচাপ তাদের চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়। কারণ চিয়া সিড যাদের নিম্ন রক্তচাপ আছে তাদের রক্তকে আরো পাতলা করে দেয়। যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেই জন্য নিম্ন রক্তচাপ রোগীদের চিয়া সিড খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়া এতে থাকা
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রক্তকে পাতলা করে দেয়। চিয়া সিড খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে যায়। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণও কমে যায়। সতর্কতার বিষয় এই যে যদি রক্তের শর্করার পরিমাণ যদি অনেক বেশি কমে যায় তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে তাই যারা নিয়মিত ইনসুলিন নেন তারা চিয়া সিড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যাবে কি
চিয়া সিড স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যাবে কিনা? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ খাওয়া যাবে। একজন গর্ভবতী মহিলা সুস্থ থাকার জন্য দিনের প্রায় ৬৫৯ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রয়োজন। মাছ, আখরোট, এভোকাডো খেলে অনেকটা ঘাটতি
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ
পূরণ হয়। কিন্তু চিয়া সিড খেলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি ফলিক অ্যাসিড ও পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ফলিক অ্যাসিড সময়ের আগে শিশু জন্মানোর আশঙ্কা কমায়, ত্রুটি রোধ করে এবং শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক।
ত্বকের যত্নে চিয়া সিড
ত্বকের যত্নে চিয়া সিডের অবদান অনেক। ত্বকে আদ্রতা বজায় রাখতে এবং মুখে বয়সে ছাপ আটকাতে চিয়া সিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চিয়া সিডে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। যা ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। চিয়া সিডে ঢাকা ভিটামিন ই, আন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে নানা দূষিত পদার্থ ওকোষের ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এইতো রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমিটারি উপাদান ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ভেজানো চিয়া সিড মুখে মাখলে ভালো উপকার পাবেন।
মন্তব্য
এতক্ষণ আমরা চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানলাম। আশা করি এইসব চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতার তথ্য জেনে উপকৃত হবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html
comment url