গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়

গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়, এটা সকল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রয়োজন। ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। তবে অতিরিক্ত ঘুমানোও ভালো নয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে অনেকের একটুতে ক্লান্ত বোধ করেন। তবে চিন্তার কোন কারণ নেয় সাধারণ একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় আপনি বিশ্রাম নিতে পারেন তবে অতিরিক্ত ঘুমানো যাবেনা। গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয় জানতে পুরো আর্টিকেল কি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়-গর্ভকালিন সময় সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা হয় সেটি হচ্ছে অত্যাধিক ক্লান্তি বোধ অনুভূত হওয়া। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘুম বেশি হয়। ঘুমের চাহিদা পূরণের জন্য সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঘুমের ফলে বাচ্চার ক্ষতি করে। আবার পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সেটাও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। 
.

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় শারীরিক গঠনের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটে। তাই গর্ভকালীন সময়ে অনেক কারণে একটুতে ক্লান্তি বোধ অনুভব হয়। এজন্য অনেক গর্ভবতী মেয়েরা গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকে। বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন কিন্তু অতিরিক্ত শুয়ে থাকলে বাচ্চার অনেক ক্ষতি হতে পারে। চলুন গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি কি সমস্যা হয় জানা যাক -
  • গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব না কমে যায়।
  • গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে শিশুর ও মায়ের ওজন পায়।
  • গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে গর্ভে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে গর্ভে থাকা সন্তানের মাথা বড় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে মৃত সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে গর্ভবতী মায়ের পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে।
  • একটানা অনেকক্ষণ উপুর বা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে হয়ে থাকা শিশু শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়

গর্ভবস্থায় বেশি ঘুমালে বাচ্চার ক্ষতি হয়। গর্ভাবস্থায়  বেশি ঘুমালে স্বাভাবিক প্রসব ও  অনেক জটিলতা বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে মা ও বাচ্চার ওজন বেড়ে যায়। হরমোন নিঃসরণ অনিয়মিত হয় যার
ফলে ক্লান্তি  লাগে এবং ঘুম ঘুম ভাব হয়। গর্ভাবস্থায় ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো উত্তম। কারো যদি এর
থেকে বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয় তাহলে দিনের অন্যান্য সময় অল্প অল্প করে ঘুমাতে পারে। তবে একটানা অনেকক্ষণ ঘুমানো যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। অতিরিক্ত ঘুম কিংবা ঘুমহীন দুটোই বাচ্চা ও মায়ের জন্য ক্ষতিকর।

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘুম আসার কারণ

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘুম আসার কারণ হলো গর্ভাবস্থায় ত্রৈমাসিকের সময় গর্ভবতি নারীদের রক্তের পরিমাণ ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় ঘুম বেশি আসার সম্ভবনা থাকে। আবার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় গর্ভবতী মায়েরা তাদের শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বহন করা এবং প্রসবের কাছাকাছি সময় এবং গর্ভাবস্থায় বেশি চিন্তিত থাকে, তাই এই সময় তাদের অতিরিক্ত সময় কাটে।

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষতিকারক দিক

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘুমালে বাচ্চার অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের অতিরিক্ত ঘুমের কারণে বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অতিরিক্ত ঘুম কিংবা ঘুমহীন দুটোই বাচ্চা ও মায়ের জন্য ক্ষতিকর। একটানা দীর্ঘ সময় বেশি ঘুমালে অবস্থা শেষের মাসে ভাবে অপরিণত ঘুম হলে
মৃত সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘুম পরিহার করতে হবে। যদিও সবার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুম হয় না, অনিদ্রা বেশি দেখা যায় কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুম দেখা যায়। রাতের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো প্রয়োজন রাতে সাউন্ড স্লিপ হলে দিনের বেলা বারবার ঘুমিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় ঘুমের উন্নতি করা যায় কিভাবে

গর্ভাবস্থায় অনেকের অনেক ধরনের সমস্যা হয়। কারো ঘুম বেশি হয় কারো আবার ঘুম কম হয়। অতিরিক্ত বেশি ঘুম বা অতিরিক্ত কম ঘুম গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ও বাচ্চা জন্য ক্ষতিকর। যাদের গর্ভাবস্থায় কম ঘুম হয় তারা তাদের ঘুমের উন্নতি করার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে তারা এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন। এগুলো হলো -

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ব্যায়াম করা

উন্নত ঘুমের একটি কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম করা। গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার শারীরিক ও মানসিক দিকের উপকারি। তবে কোনো ভারী ব্যায়াম করা যাবে না। গর্ভবতী মহিলাদেরকে অবশ্যই করতে হবে। নিয়মিত প্রতিদিন করলে শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। স্নায়ু সচল থাকে। যার কারণে প্রতিদিন ব্যায়াম করলে যাদের অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ব্যায়াম করলে অনেকটা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।এতে যাদের ঘুমের উন্নতি ঘটবে।

গর্ভাবস্থায় ম্যাসাজ করতে পারেন

ম্যাসাজ আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত প্রশান্তি দায়ক। যে কোন বয়সের মানুষ ম্যাসাজ করতে পারেন। ম্যাসাজ ঘুমের জন্য ভালো সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তাই গর্ভকালিন সময়ে ম্যাসাজ গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত ব্যথা, যন্ত্রনা কমাতে এবং গর্ভাবস্থায় ঘুমের উন্নতি করতে অত্যন্ত কার্যকারী।

গর্ভাবস্থায় বিশেষ বালিশের সাহায্য নেওয়া

বেশিরভাগ মেয়েদের গর্ভাবস্থায় ঘুমের অনেক সমস্যা হয়। অনেক সময় গর্ভবস্থায় ভালো ঘুমের জন্য একটি বিশেষ বালিশ আপনাকে সাহায্য করতে পারে। ঘুমের উন্নতি করার জন্য আপনি এই পদ্ধতিতে অনুসরণ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় ঘুমের জন্য রুটিন তৈরি করা

যেহেতু গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় তাই আপনি গর্ভকালীন সময়ে আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট রুটিনে মাইন্ড সেট আপ করে নিতে পারেন। এবং প্রতিদিন আর একটি নির্দিষ্ট টাইমে ঘুমানোর অভ্যাস করলে ঘুমের উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। গর্ভাবস্থায় রাতে নির্দিষ্ট সময়ের ভালো ঘুম হওয়া আপনার ও বাচ্চা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অপর্যাপ্ত ঘুম বাচ্চার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা

ভালো ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকাটা অনেক জরুরী। ঘুমানোর পরিবেশ যদি ভালো থাকে তাহলে ঘুমাও ভালো হয়। এজন্য আপনি আপনার বেডরুম কে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারেন এবং আপনাকে আরেকটি কাজ করা লাগবে সেটি হচ্ছে মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে রেখে দিন যাতে আপনি সহজে মোবাইল ফোনটি হাতের নাগালে না পান। তাই গর্ভাবস্থায় ঘুমের উন্নতি করার জন্য ঘুমের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় শোয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় দিনে কম ঘুমানো এবং রাতে বেশি ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় বাম পাশে ঘুমালে ভালো হয়। তবে একটানা শুয়ে থাকা যাবে না। কিছুক্ষণ পরপর সাইড চেঞ্জ করার প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় শোয়ার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হয় কোনভাবেই চিৎ হয়ে বা উপুর হয়ে শোয়া যাবে না।

গর্ভবতী অবস্থায় কিভাবে ঘুমাতে হয়?

গর্ভবস্থ অবস্থায় প্রথম তিন মাস পর্যন্ত চিৎ হয়ে বা উপুর হয়ে শোয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে শোয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় শোয়ার নিয়ম হচ্ছে ডান পাশ ও বাম পাশে হয়ে শোয়া। গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে জরায়ুতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। যার কারনে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে বা উপুর হয়ে শোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কিভাবে শোয়া উচিত?

গর্ভাবস্থায় অবস্থানে ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিৎ হয়ে বা উপুর হয়ে শোয়া বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় ডান পাশ বা বাম পাশে শুতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্রামের জন্য আপনি চাইলে দুই হাঁটুর মাঝে এবং পেটের নিচে নরম বালিশ দিয়ে ঘুমাতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমানো কি খারাপ?

একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য দিনে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো যথেষ্ট। বাচ্চা ও মায়ের স্বাস্থ্য অনেকটা সাহায্য করবে। কিন্তু এর থেকে বেশি ঘুমানো উচিত নয়। ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমালে বাচ্চা ও মা উভয় ঝুঁকিতে থাকবে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে মায়ের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ঘুমের কারণে বাচ্চার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই অভ্যাস তাই বেশি ঘুমানো অবশ্যই খারাপ এবং এটি পরিহার করা প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুমের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমালে সেটি
বাচ্চার উপর দীর্ঘমেয়াদি ভব ফেলতে পারে। একটি গবেষণা দেখা গেছে যেসব গর্ভবতী মহিলারা শেষ রাতের দিকে ছয় ঘন্টার কম ঘুমায় তাদের সি- সেকশন প্রসবের সম্ভাবনা ৪.৫ গুণ বেশি। তাই রাতের বেলায় দীর্ঘক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি গর্ভবতী মহিলাদের মাঝরাতে কয়েকবার ঘুম ভেঙে যায়
বা এমন অভ্যাস থাকে তাহলে সকলে, দুপুরের পর, বিকেলে কিছু অতিরিক্ত সময় ঘুমানোর জন্য বরাদ্দ করতে পারেন। গর্ভবস্থায় ঘুমের সময় বারবার ঘুমের ডিস্টার্ব হয় তাহলে শ্বাস প্রশ্বাস গর্ভবতী মহিলাদের প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় দীর্ঘদিন অনিদ্রা থাকলে গর্ভে থাকা সন্তান মৃত হওয়া আশঙ্কা বেড়ে যায়। এইসব কারণে অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন।

মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলটিতে গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কম বা অতিরিক্ত বেশি ঘুমানো যাবে না। এতে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। আশা করি আপনার আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url