বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

বাত ব্যথা কে আর্থ্রাইটিস বলে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ একটু বয়স হলেই বাত ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন। বাত ব্যথা সাধারণত শরীরের বিভিন্ন অংশ, হাড়ে কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা হাওয়াকে
বোঝায়। তবে এই বাত ব্যথা মাঝে মাঝে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে অনেক সময় শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কে বিকল করে দিতে পারে। বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়, বাত ব্যথার কারণ,  জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

আমাদের দেশের একটি নির্দিষ্ট বয়স সীমায় প্রায় অধিকাংশ মানুষ বাত ব্যথায় আক্রান্ত। বাত রোগ হচ্ছে প্রদাহ জনিত ব্যথা কারণ। অস্থিসন্ধের একটি গুরুতর সমস্যা হচ্ছে বাত রোগ।  তাই আপনার যদি বাত ব্যথা হয় তাহলে বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে বাত ব্যথা রোগীদের ব্যথা আরো বেশি বেড়ে যায়। ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষেরা সবচেয়ে বেশি বাত ব্যথায় আক্রান্ত হয়।
.

বাত ব্যথার কারণ

বাত ব্যথা রোগটি সাধারণত বেশ কয়েকটি কারণে হয়ে থাকে।
  • জেনেটিক কারণে বাত ব্যথা হতে পারে। অর্থাৎ যদি কারো পরিবারে বাবা মা চাচা ফুপু ভাই বোন রক্ত আত্মীয়দের কারো বাত ব্যথা থাকলে। আপনারাও বাত ব্যথায় সমস্যা হতে পারে।
  • জীবন অভ্যাসে পরিবর্তন এর কারণে বাত ব্যথা হতে পারে। যদি কায়িক শ্রম বেশি হয়ে থাকে তাহলে বাত ব্যথা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে বাত ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রম ও বাত ব্যথার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
  • মাংসপেশি বেশি ব্যবহার করলে বাত ব্যথা হতে পারে। যারা অতিরিক্ত শ্রম করে শ্রমিক বা খেলোয়াড়দের মাংসপেশী সব থেকে বেশি ব্যবহার হয়। অতিরিক্ত মাংস এসে ব্যবহার করার কারণে তাদের বাত ব্যথা হতে পারে।
  • বয়স জনিত কারণে বাত ব্যথা হতে পারে। বাত ব্যথা সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পায়। ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে বাত ব্যথা বেশি দেখা যায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মনো ম্যানোপোজের হরে ঘনত্ব কমে গেলে বাত বাথার উৎপত্তি হয়।
এছাড়া আরো অনেক কারণে বাত ব্যাথা হতে পারে। তবে বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। 

বাত ব্যথার লক্ষণ ও উপসর্গ

বাত ব্যথার লক্ষণ গুলো হলো-
  • গিটে ব্যথা।
  • গিট ফুলে যাওয়া।
  • হাত-পা ভালোভাবে নাড়াতে না পারা।
  • ত্বকের রেশ এর সৃষ্টি হওয়া।
  • মাথার চুল ঝরে যাওয়া।
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • মুখের ভেতর ঘা হওয়া।
  • হাত-পা অবশ হয়ে আসা।
বাত ব্যথা হলে সাধারণত এইসব লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। তাই এসব লক্ষণ আপনার বা আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখতে পেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এবং বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানুন।

বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় রয়েছে অনেক গুলো। চলুন বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানা যাক;

ব্যায়াম করা

বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যায়াম করা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। বাত ব্যথায় আক্রান্ত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাদের বয়স একটু বেশি বাত ব্যথা আক্রান্ত তারা হালকা ব্যায়াম গুলো করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে বাত ব্যথা থেকে আরেকটা নিরাময় পাওয়া যায়।এছাড় প্রতিদিন
৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা হাটাহাটি করলে বাত ব্যথা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করলে শরীরের নড়াচড়ার কারণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জয়েন্ট গুলোকে শক্ত করে এবং ব্যাথা থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। তাই বাত ব্যাথার রোগীদের দৈনন্দিন জীবন তালিকায় হালকা ব্যায়াম যোগ করতে পারেন।

ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করা

বাত ব্যথা মূলত শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাবে হয়ে থাকে। শীতের সময় এ সমস্যা বেশি বেড়ে যায়। এর জন্য বাত ব্যথা রোগীদেরকে বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জন্য ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য বা ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খেতে হবে। যেসব খাদ্য ভিটামিন ডি পাওয়া যায় বাত ব্যথা রোগীদেরকে সেসব খাদ্য নিয়মিত খেতে হবে এবং সাথে দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিম, মাশরুম ইত্যাদি খেতে হবে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া

আমাদের সবার শরীর সুস্থতার জন্য ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, লিপিড জাতীয় খাদ্য প্রয়োজন। ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরের জয়েন্টের ব্যথা অনেকটা নিরাময় হতে সাহায্য করে। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি জাতীয় খাদ্য ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যা বাত ব্যথা নিরাময় সাহায্য করবে। 

হাইড্রেশন

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম থাকে। সব আবহাওয়ার জন্যই শরীরকে হাইড্রেশন রাখা অনেক জরুরী। আর শরীরকে হাইড্রেট রাখার জন্য যে বিষয়টির উপর খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। এছাড়াও তরল জাতীয় খাদ্য যেমন সুপ, জুস, আখের রস, ডাবের পানি এইসব খাবার খেতে হবে। যার ফলে বাত ব্যথার সমস্যা দূর হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে শরীর হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ভারী পোষক পরিধান

শীতকালের তাপমাত্রার উঠানামা রাতে শীতকালে গরম পোশাক পড়তে হবে এবং উষ্ণ রাখতে হবে। কারণ শীতকালে তাপমাত্রার জন্য বাত ব্যথা বেড়ে যায়। তাই যতটা সম্ভব শীতকালে যাতে আপনি বেশি শীতল না হয়ে যান সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই যারা বাত ব্যথার রোগী আছেন তাদের শীতকালে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

বাত রোগ হলে কি খাবার খাবেন

বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় অন্যতম হলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ক্যাম্পফেরল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি বাত ব্যথা নিরাময়ের বেশ কার্যকর।
  • বাত ব্যথার জন্য সামুদ্রিক মাছ অত্যন্ত উপকারী। সামুদ্রিক মাঝে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় সাথে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি ও পাওয়া যায়। যা বাত রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। স্যামন, ম্যাকেরেল, ইত্যাদি সমুদ্রিক মাছ বাত ব্যথা নিরাময় বেশ উপকারী। অস্থিসন্দেহে স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন ডি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ হয় এমন খাদ্য যেমন: ভিটামিন বি১২, লাল চাল, লাল আটা, দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, ছোট মাছ ইত্যাদি বাত ব্যথা নিরাময়ের জন্য নিয়মিত খেতে হবে। এগুলো নিয়মিত খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে। এছাড়া আর্থ্রাইটিস রোগীরা ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করার জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে পারেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ খেতে হবে।
  • বাত ব্যথার রোগীদের জন্য বাতের ব্যথা কমাতে ব্রোকলি ও বেশ কার্যকারি। ব্রোকলিতে রয়েছে সালফোরাফেনের মতো একাধিক প্রদাহ নাশক উপাদান। যা বাত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • আদা, রসুন, দারচিনি, এলাচে রয়েছে প্রদাহ নাশক গুণ। তাই নিয়মিত আদা রসুন দারচিনি বাতের ব্যথা অনেকটা কম হয়। বাতের ব্যথার রোগীরা এই ট্রিকসটা ফলো করতে পারেন।
  • নিয়মিত আখরোট খেলেও ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আখরোটে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। যা বাত ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।

বাত ব্যথা হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না

এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো খেলে বাত ব্যথা বেড়ে যায়। বাত ব্যথা নিরাময় সেসব খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চলুন বাত হলে কি কি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে সেগুলো জানা যাক -
  • লেবু টমেটো আমড়া জাতীয় ফল শিকড় জাতীয় খাবার বাত ব্যথা রোগীদের খাওয়া যাবেনা।
  • সাদা ময়দা, সাদা চিনি এইসব বাত ব্যথা বাড়ায় তাই বাত ব্যথার রোগীদের সাদা ময়দা, সাদা চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • বাত ব্যথার রোগীদের মধ্যে যাদের মদ্যপান করার অভ্যাস রয়েছে তাদেরকে মদ্যপান যত দ্রুত সম্ভব ছাড়তে হবে। কারণ মদ্যপান করলে বাত ব্যথার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই বাত ব্যথার রোগীদের মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
  • অতিরিক্ত চিনি বা চিনি জাতীয় খাদ্য খাওয়া যাবেনা। জিন জাতীয় খাদ্য খেলে বাত ব্যথার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়, চকলেট, ক্যাফিন জাতীয় খাদ্য, অতিরিক্ত মিষ্টি চা কফি ইত্যাদি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে বাত ব্যথা রোগীদেরকে। এইসব খাদ্য বাত ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এগুলো না খাওয়াই ভালো।
  • লাল মাংস (অর্থাৎ গরু খাসির প্রক্রিয়াজাতকৃত), রেড মিট খাওয়া যাবে না। এইসব খাবার প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে। এইসব খাদ্যে যে উপাদান গুলো থাকে সেগুলোর বেশিরভাগ বাত ব্যথা রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাত ব্যথার রোগীদের এইসব খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
  • বাত ব্যথার রোগীদের যদি কারো অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সেটি দ্রুত ত্যাগ করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত লবণ খেলে দে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে বাত ব্যাথার রোগীদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
  • গ্লুটেন জাতীয় খাদ্য (যেমন: বার্লি, গম) খাওয়া এড়িয়ে হতে হবে। বাত ব্যথার রোগীদের জন্য গ্লুটেন জাতীয় খাদ্য ক্ষতিকর।

মন্তব্য

অস্থিসন্ধিতে ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়ে বাত ব্যথার উৎপত্তি হয়ে থাকে। বাত ব্যথার রোগের প্রতিরোধের জন্য দৈনন্দিন জীবনযাপনে ও খাদ্য ভাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে সেগুলো আমরা উপরে দেখলাম। আজকের আইপিএলটিতে বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করি আপনার ভালো লাগবে। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url