লটকন খাওয়ার উপকারিতা কি
লটকন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি বর্ষাকালীন ফল। বর্ষাকালে বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এইসব রোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্লু বা জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি। এইসব রোগ থেকে দূরে থাকতে
সাহায্য করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যার মধ্যে একটি ফল হচ্ছে লটকন।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লটকনের পুষ্টি গুণ ও অনেক। লটকন খাওয়ার উপকারিতা কি ,লটকন খেলে সারবে যেসব রোগ বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ভূমিকা
লটকন সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড এ চাষ করা হয়। লটকন টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত বহুল পরিচিত একটি ফল। অন্তর ভেদে লটকনের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে যেমন- লটকা,লটকাউ, বুগি, ডুবি, হাড়ফাটা, কানাইজু ইত্যাদি। ইংরেজিতে লটকন কে বলে Burmese grape.
.
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
লটকন ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস। লটকনে রয়েছে ভিটামিন ও অক্সিডেন্ট। যাদের মুখে ঘন ঘন ঘা এর সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন লটকন খেতে পারেন।
- প্রতিদিন কয়েকটি লটকন খেলে শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব।
- ত্বকের রুক্ষতা ও ত্বক ফেটে যাওয়া প্রতিরোধে টকন বেশ কার্যকরী।
- লটকন টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হওয়ায় রুচি বাড়াতে সহায়তা করে পাশাপাশি বমি ভাব কমায়।
- রসালো লটকন পানির সমুদ্র বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বর্ষার স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় ত্বকে নানা ধরনের সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত লটকন খেলে চর্মরোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
- বর্ষাকালে বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ফ্লু বা জ্বর, সর্দি, কাশি থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লটকন।
- মানুষের শরীরের শক্তির উৎস বাড়ায় লটকন। লটকনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন এবং প্রোটিন। যা সারাদিন সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।
- কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি দিতে পারে নানা উপকারী উপাদানে ভরপুর ঠাসা এই লটকন ফলটি।
লটকন খেলে সারবে যেসব রোগ
লটকন হলো হলুদ রঙে ছোট গোলাকার ফল। টক মিষ্টি রসালো স্বাদ যুক্ত এই ফলটি ছোট হলেও এই পুষ্টিগুণ অনেক। বর্ষার মৌসুমে এই ফলটি বাজারে পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ের রাস্তাঘাটে সব জায়গায় এই ফলটি পাওয়া যাচ্ছে। লটকন খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। শরীরে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। লটকন এমন সব উপাদানে ঠাসা যাতে কোলন ক্যান্সারসহ নানা জটিল ও কঠিন অসুখ দুটির ও কঠিন অসুখ সারাতে কার্যকরী। ছোট বড় সব বয়সের মানুষ এই ফলটি খেতে পারবে। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। চলুন লটকন খেলে সারবে কি সব রোগ সে সম্পর্কে জানা যাক -
- লটকনে রয়েছে নানা খনিজ উপাদান। এসব খনিজ উপাদান গুলো হলো পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এসব ভয়েজ উপাদান শরীরটা সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনের ৯ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্রোমিয়াম থাকে।
- লটকনে রয়েছে ভিটামিন সি যা দাঁত ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি কারণে দিনে ২/৩ বার খেলেই দৈহিক ভিটামিন সি চাহিদা পূরণ হবে।
- রক্ত ও হাড়ের জন্য বিশেষ উপকারি ফল লটকন। কারণ এইতো রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রামে লটকনের ৫. ৩৪ গ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
- ভিটামিন বি -১ এবং ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল হল লটকন। লটকন ভিটামিন বি-১ এর পরিমাণ হলো ১০.৪ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন বি-২ এর পরিমাণ হলো ০.২০ মিলিগ্রাম। বেডিবি রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে লটকন।
- লটকনে আরো রয়েছে অ্যামাইনো এসিড ও এনজাইম। জাতীয় গঠন ও কোষ কলা সুস্থতা রক্ষায় কাজ করে। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- খাদ্য শক্তি ভালো উৎস হলো লটকন। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে ৯২ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি পাওয়া যায়। যা কাঁঠালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
- বর্ষার মৌসুমে নিয়মিত লটকন খেলে বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। এতে ভিটামিন সি থাকায় চর্মরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- নিয়মিত লটকন খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়। পাশাপাশি মানুষের অবসর দূর করতে সাহায্য করে এই লটকন।
- গরমে তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম এই লটকন। কারণ জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি। এমনকি ডিহাইড্রেশন কাটিয়ে উঠতেও লটকন সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে লটকন।কারণ এই ফলের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি নেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীর রক্ত শর্করা মাঠে নিয়ন্ত্রণ রাখতে লটকন খেতে পারবে।
লটকন খেলে কি ওজন বাড়ে
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা লটকন ফল খেতে খুব বেশি পছন্দ করে। লটকনে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড। যার দেহে গঠন ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে বলে আমরা অনেকে মনে করি যে লটকন খেলে স্বাস্থ্যের ওজন বাড়ে। কিন্তু আমাদের এ ধারণা দিয়ে একেবারেই ভুল। লটকন খেলে
শরীরের ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমে যাদের অতিরিক্ত স্বাস্থ্যের ওজন রয়েছে তাদের জন্য লটকন অনেক বেশি উপকারী। লটকন মূলত শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। যারা অতিরিক্ত ওজনের জন্য চিন্তার মধ্যে আছেন তারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিয়মিত লটকন ফল খেতে পারেন।
এবং লটকনে থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লটকন ফলের উপকারিতা পাশাপাশি লটকনের পাতা ও ওষুধের কাজ করে। লটকন গাছের পাতা ও শিকড় খেলে ধরনের পেটের নানা ধরনের অসুখ ভালো হয় ও জ্বর ভালো হয়। লটকন গাছের শুকনো পাতার গুড়া ডায়রিয়া রোগে বেশ দ্রুত কাজ করে থাকে।
লটকন কিভাবে খায়
আমরা অনেকে লটকন ফল খেতে পছন্দ করি কিন্তু অনেকে জানিনা যে লটকন কিভাবে খেতে হয় লটকন মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে এবং লটকন গরমে তৃষ্ণা মেটাতে খাওয়া যায়। লটকন ফলে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকা সাধারণত বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। তবে
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে অনেক সময় ক্ষুধা মন্দা দেখা দিতে পারে তাই অতিরিক্ত লটকন ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। লটকন কিভাবে খায় জানতে নিজের থাকলো অনুসরণ করুন -
লটকন পরিষ্কার করা
সর্বপ্রথম লটকন পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যাতে ময়লা ও ধুলা দূর হয়।
লটকন খোলা
লটকনের বাইরের দিকের খোসা হাত দিয়ে চেপে অথবা সামান্য অংশ ছুরি দিয়ে বা বটি দিয়ে কেটে ভালোভাবে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।
বীজ পৃথক করা
এরপর লটকনের ভেতরে ছোট ছোট বিষ থাকে বীজগুলো সাধারণত পেতে হয় তাই বীজগুলো আলাদা করে ফেলতে হবে।
খাওয়া
বীজগুলো পৃথক করা হয়ে গেলে এখন সর্বশেষ কাজ হচ্ছে খাওয়া। এখন আপনি লটকন ফলটি খেতে পারেন তবে শুধুমাত্র মাংসর অংশটি। লটকনের স্বাদ টক মিষ্টি জাতীয়।
লটকন খাওয়ার সতর্কতা
বীজের তেতো স্বাদ: লটকনের বীজ সাধারণত হয় গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
পরিছন্নতা: লটকন খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে তারপর খাওয়া উচিত। লটকন খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে করে নিতে হবে যাতে কোন রাসায়নিক অণু বা জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
এলার্জি পরীক্ষা করা: লটকনে অ্যালার্জি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা। খেলে যদি এলার্জি সমস্যা হয় তাহলে লটকন না খাওয়াই ভালো।
সংযমিত পরিমাণে খাওয়া: অতিরিক্ত লটকন খাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু অশান্তি বা অম্লতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত।
লটকন খাওয়ার উপকারিতা
লটকন হলো টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত ও মুখোশক একটি ফল। এটি এমনি খাওয়া যায় আবার লবণ মরিচের গুড়া মিশিয়ে ও খাওয়া যেতে পারে। লবণ ও মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে টক ফল খেতে খুব ভালো লাগে।
এছাড়াও অনেকে আছে গরমে তীব্রতা কমাতে ও শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে লটকন
আরো পড়ুনঃ কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ফলটি খেয়ে থাকেন। পাকা লটকন সাধারণত বেশিরভাগ মিষ্টি হয়ে থাকে। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারদর্শী এ লটকন ফল যা করুন ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ হিসেবে পরিচিত। নিজে কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো -
ভিটামিন এবং মিনারেলসের এর উৎস হিসেবে
ভিটামিন সি - লটকন হল ভিটামিন সি এর একই সমৃদ্ধ সোজা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ - চোখের স্বাস্থ্য জন্য ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ এবং লটকন এটি সরবরাহ করতে সাহায্য করে থাকে।
ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস - লটকনে থাকে এই মিনারেল গুলো এবং দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
লটকন রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রী রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করে।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে
লটকনে রয়েছে ফাইবার যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
লটকন হচ্ছে একটি কম ক্যালরি বিশিষ্ট ফল। যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
লটকনে রয়েছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহায়ক। এটি হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
লর্ড করে ঢাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক হতে পারে।
লটকন এর অপকারিতা
লটকন যেমন উপকারিতা অনেক তেমনি কিছু অপকারিতও রয়েছে। লটকন সাধারণত আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে। সাধারণত লটকন শরীরকে সুস্থ একটা কার্যকর।
- অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা লটকন লটকন ফল অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা যেমন অ্যাসিডিটি, ফোলাভাব বা ডায়রিয়া হতে পারে।লটকন ফল খেলে কিছু মানুষের অ্যাসিডিটি বা অম্লতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- বিশেষ করে যাদের পেটে গ্যাস বা অম্লতার সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে।
- লটকনের বিস্তৃত হয় এবং তা খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হতে পারে। তাই বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- কিছু কিছু মানুষের লটকন ফলে এলার্জির অনুভব হতে পারে। যদি আগে কখনো লটকন খেয়ে না থাকেন তবে প্রথমবার খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে।
- লটকন ফলে কিছু পরিমাণে চিনি থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের লটকন খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত।
মন্তব্য
আশা করি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে লটকনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরকম নিয়মিত আর তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html
comment url