থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।থানকুনি ও কি পরিচিত এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে
Centtella asiatica. এটি খুব ছোট আকারের বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। থানকুনি পাতার ১২ উপকারিতা জানতে পুরো আর্টিকেলটি অনুযোগ দিয়ে পড়ুন। আজকে আর্টিকেলটিতে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

থানকুনি হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত একটি ভেষজ । থানকুনি পাতা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার হয়। থানকুনি প্রচন্ড উপকারী একটি উদ্ভিদ। থানকুনি কত সৌন্দর্য চর্চা, পেটের অসুখ দূর করতে, ক্ষতদূর করতে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে।
.

থানকুনি পাতার গুনাগুন

  • থানকুনি পাতা গলার ব্যাথা উপশম করে।
  • থানকুনি পাতা সর্দি দূর করতে সাহায্য করে।
  • থানকুনি পাতা মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করে।
  • থানকুনি পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
  • পেটের প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
  • থানকুনি পাতা আমাশয়ে সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  • থানকুনি পাতা সামায়িকভাবে কার্শি কমাতে সাহায্যে করে।
  • মুখের ঘা ও অন্যান্য ক্ষত দূূর করতে সাহায্য করে থানকুনি পাতা।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। চলুন থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো জানা যাক -

থানকুনি পাতার ১২ উপকারিতা

১. আলসার দূর করতে
আলসার সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতা অত্যন্ত কার্যকারী। থানকুনি পাতা পেটের যেকোনো সমস্যার জন্য ভীষণ উপকারী। আমাশয়, আলসার, পেট ব্যথা একটি বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্মময় হয় থানকুনি পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা
থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার মাধ্যমে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই যাদের হজমের সমস্যা, আলসারের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা খেতে পারেন।

২. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে
নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে শরীরের পেন্টোসাইক্লিন ট্রিটারপেনস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের এর উৎপাদনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। যার ফলে ব্রেনসেল চমৎকারভাবে কাজ করতে শুরু করে। তাই থানকুনি পাতা মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধির সাথে বুদ্ধিও বেড়ে যায়।

৩. শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করতে
থানকুনিতে রয়েছে ম্যাডেকাসসাইড। যা ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রেখে ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা ও প্রশান্ত করে পারে। যার কারনে ত্বকের মধ্যে সতেজ ভাব ফুটে ওঠে। তাই ত্বকের জ্বালাপোড়াও দূর হয়।
৪. শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে
মানুষের বিভিন্ন কারণে রক্ত প্রবাহ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকের মধ্যে থ্রম্বোসিসের সমস্যা রয়েছে। আবার অনেকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকার কারণে শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহ হয় না। রক্ত প্রবাহে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। রক্ত প্রবাহে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।থানকুনি

পাতার রস খেলে রক্ত বিশুদ্ধ থাকে। যার ফলে শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে রক্ত প্রবাহের সমস্যা দূর হয়। যার হলে শারীরিক নানা রকম জটিলতা দূর হয়।

৫. ত্বকের ক্ষত নিরময় করতে
অনেক সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গা বিভিন্নভাবে কেটে যেতে পারে বাসায় থাকলে তো সহজেই সমস্যার সমাধান করা যায় কিন্তু যখন আমরা বাড়ির বাইরে বন জঙ্গলের মধ্যে থাকি তখন একটু সমস্যার মধ্যেই পড়তে হয়। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই আপনার যদি কিছু ক্ষত নিরাময়ক গাছ বা

পাতার কথা জানা থাকে (যেমন থানকুনি পাতা) তাহলে আপনি সহজে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। শরীরে ক্ষত জায়গায় থানকুনি পাতা একটু বেটে লাগিয়ে দিলে আরাম পাওয়া যাবে রক্ত পড়া বন্ধ হবে। আপনি বাড়িতেও আমরা শরীরের কোথাও কেটে গেলে থানকুনি পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগাতে পারেন। এতে ব্যথা উপশম হবে এবং পাশাপাশি রক্ত পড়া বন্ধ হবে। 
৬. মানসিক অবসাদ দূর করতে
মানসিক অবসাদ দূর করতে একটি কার্যকরী ভেষজ হচ্ছে থানকুনি পাতার রস। থানকুনি পাতায় থাকা উপাদানগুলো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে মানসিক চাপ এবং অস্থিরতা প্রশমিত হয়। তাই অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।তাই যারা ওষুধ ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে মানসিক অবসাদ দূর করতে চান তারা নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।

৭. ভালো ঘুমের জন্য
অনেকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা রয়েছে। যাদের এমন সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা ভেজানো পানি খেতে পারেন। নিয়মিত থানকুনি পাতার ভেজানো পানি খেলে স্নায়ু শিথিল হয়। যার ফলে ভালো ঘুম হয়। এজন্য যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা ভেজানো পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

৮. ত্বকের বলিরেখা দূর করতে
থানকুনি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্লাভোনয়েড এবং সক্রিয় উপাদান। যা ম্যাডেকাসাইড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে। যার কারণে দূষণ ও সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক কে ঠিক রাখতে, ত্বকের উপর বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতা রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কোলোজেনের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোলাজেন ত্বকের বলিরেখা রোধ করতে এবং ত্বকের নমনীয়তা বাড়াতে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে কাজ করে।

৯. ত্বকের আদ্রতা ও কোমলতা বজায় রাখতে
থানকুনি পাতার রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, বিটা কারোটিন এবং ফাইটোক্যামিকেল ইত্যাদি ত্বকের জন্য প্রয়োজনে পুষ্টি উপাদান। তার ফলে ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পরিপূর্ণ হয়ে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে। ত্বক কোমল রাখতে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কম দৃশ্যমান হতে সাহায্য করে।

১০. চুল পড়া রোধ করতে
থানকুনির নির্যাস চুল পড়া নিরোধকারী পণ্যে অনেক সময় ব্যবহার করা হয়। এতে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই চুল পড়া রোধ করতে নিয়মিত থানকুনি পাতার নির্যাস ব্যবহার করতে পারেন।

১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
থানকুনি পাতা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়া সর্দি কাশি নিরাময়ে, মুখের ঘা দূর করতে, পেটের প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে হবে অবদান রাখে। এসব সমস্যার জন্য থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
১২. মূত্রনালী সংক্রমণ রোধ করতে
থানকুনি পাতা রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে থানকুনি পাতা মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। তাই যাদের মুত্রনালীর সংক্রমণ এর সমস্যা রয়েছে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার নির্যাস খেতে পারেন। এর জন্য প্রথমে

তাজা থানকুনি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে সেদ্ধ করতে হবে। তারপর সেই পানি একটি গ্লাসে ছেঁকে নিতে হবে। এরপর ছেঁকে নেওয়া পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। এইভাবে নিয়মিত খেলে মূত্রনালী সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। 

থানকুনি পাতার ব্যবহার

থানকুনি পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। থানকুনি পাতা পেটের সমস্যা, হাঁপানি, একজিমা, নানা চর্ম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। থানকুনি পাতার ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত প্রতিদিন থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে বড় বড় রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। মানসিক অবসাদ এবং অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমাতে পারে।

থানকুনি পাতার অপকারিতা

আমাদের শরীরের জন্য কোন কিছু অতিরিক্ত পরিমাণে ভালো নয়। থানকুনি পাতার যেমন অনেক উপকারী দিক আছে তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহার করলে এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন থানকুনি
পাতার অপকারিতা গুলো জানা যাক -
  • যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য থানকুনি পাতা ক্ষতিকর। তাদের কোনভাবেই থানকুনি পাতা খাওয়া যাবেনা। এতে শারীরিক নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই লিভারের রোগীদের থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • থানকুনি পাতা প্রয়োজনের বেশি খেলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যাদের অপারেশন হয়েছে এমন রোগীদের থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো।
  • থানকুনি পাতা থেকে এলার্জি খোস-পচড়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • থানকুনি পাতা যেমন পেটের ব্যথার উপসম ঘটায় তেমনি প্রয়োজনের বেশি খেলে পেট ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তাই থানকুনি পাতা পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

মন্তব্য

আজকে আর্টিকেলটিতে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করি আপনার ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url