ড্রাগন ফল খাওয়ার ১০ উপকারিতা

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপক হরে ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে। ড্রাগন হচ্ছে একটি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং আকর্ষণীয় ফল। এটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি পুষ্টি গুনে ভরপুর। ড্রাগন ফল খাওয়ার
উপকারিতা অনেক। আজকে আর্টিকেলটিতে ড্রাগন ফল খাওয়ার ১০ উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
.

ড্রাগন ফলের পরিচিতি

বর্তমান সময়ের ড্রাগন একটি অতি পরিচিত ফল। ড্রাগন ফলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম হচ্ছে Hylocereus undatus (হায়লোসেরিয়াস আনডেটাস)। এটি পিতায়য়া নামেও পরিচিত। ড্রাগনফরের বাইরের খোসা দেখতে অনেকটা রূপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো এবং ড্রাগন গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাস এর

ন্যায়। ড্রাগন ফলের সবচেয়ে প্রথম দেখা মেলে মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও মেক্সিকোতে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে এর মহাজাতি হায়লোসেরিয়াস (মিষ্টি পিতায়য়া)। যা মূলত ড্রাগন ফল নামে পরিচিত। গণচিনের বাসিন্দা 

গন ড্রাগন ফলকে ড্রাগন মুক্তার ফল হিসেবে চেনে। ভিয়েতনামে বাণিজ্যিকভাবে সার্বাধিক চাষ করা হয় ড্রাগন। বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে এই ফলটি। বাংলাদেশ এ দুই ধরণে ড্রাগন পাওয়া যায়। একটির ভেতরের অংশ গোলাপি রঙের এবং আরেকটির ভেতরের অংশ লাল রঙের হয়ে থাকে।

কিভাবে খাবেন ড্রাগন ফল

প্রথমে ড্রাগন ফলটি পানি দিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর ওপরের খোসাটি ছাড়িয়ে নিতে হবে এরপর আপনি ইচ্ছামত কেটে খেতে পারেন। ড্রাগন ফল খোসা ফেলে জুস করে খেতে পারেন খেতে পারেন আবার সাধারণ ফলের মতো কেটেও খেতে পারেন। তাপে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় তা রান্না করে না খাওয়াই ভালো।  

ড্রাগন ফল খাওয়ার  উপকারিতা ও অপকারিতা

ড্রাগন ফল যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারি এমন অপকারিও। আমরা এখন  ড্রাগন ফল খাওয়ার ১০ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানব।

ড্রাগন ফল খাওয়ার ১০ উপকারিতা

ড্রাগন ফল এখন বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। যা বিগত কয়েক বছর আগে ছিল না। ড্রাগন ফলটি দেখতে আকর্ষণীয় এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাংলাদেশ এ এর চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ।
বাংলাদেশের দুই ধরনের ড্রাগন ফল পাওয়া। এক্টির ভেতরের অংশ লাল বা গোলাপি ও আরেকটি ভিতরে অংশ সাদা। চলুন ড্রাগন ফল খাওয়ার ১০ উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।

১.কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে।

২.রক্ত চলাচল বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩.হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।

৪. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৫. হজমের সহায়ক।

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

৭. ওজন কমাতে সহায়তা করে।

৮. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।

৯. বয়সের ছাপ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১০. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

১. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ 
আমাদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো যায় ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমে। এছাড়া ড্রাগন ফল সুস্থ রাখতে ও সাহায্য করে। একটি রিসার্চ এ দেখা গেছে যারা প্রতিদিন ১টি করে ড্রাগন ফল খেয়েছে তাদের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রায় ৪.৪% কমেছে এবং যারা ২টা করে ড্রাগন ফল খেয়েছে তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমেছে প্রায় ৯.৪%।

২. রক্ত চলাচল বজায় রাখা 
 ড্রাগন ফলে রয়েছে আয়রন। সারা বিশ্বের একটি অতি পরিচিত শরীরের পুষ্টি ঘাটতি হলো আয়রনের ঘাটতি। নারীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমরা অধিকাংশ সময় ডাল বাদাম এসব খাবার থেকে আইরন গ্রহণ করে থাকি। ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের মধ্যে ১.৯ মিলিগ্রাম আইরন থাকে। যা দৈনিক 

সুপারিশকৃত মাত্রার ১০ শতাংশের বেশি। আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন হবার জন্য আয়রন অত্যন্ত প্রয়োজন। যা শরীর বিভিন্ন টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে এবং লোহিত রক্ত কণিকাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।
 ৩.হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ভালো রাখা যায়। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এই ড্রাগন ফল।
৪. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে
ড্রাগন ফলে থাকা ক্যারোটিন নামক একটি উপাদান আমাদের শরীরে থাকা টিউমার কোষ কে ধ্বংস করতে সক্ষম। যা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
৫. হজম শক্তিতে সহায়তা
ড্রাগন ফলে তুলনামূলকভাবে আঁশের এর পরিমাণ বেশি থাকে। যা পরিপক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে ড্রাগন ফল খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। যা বদহজমের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ড্রাগন ফলে রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় আন্টি অক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীর সুস্থতার জন্য ভূমিকা রাখে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় ড্রাগন থেকে। তাই নিয়মিত ড্রাগন খেলে শরীলের প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া যেতে পারে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে
ড্রাগন ফলে পানির পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ। ড্রাগন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল যা নিশ্চিত ভাবে আপনার অন্ত্রের গতিবিধিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ড্রাগন ফল শরীরের ওজন বজাই রাখতে এবং হ্রাস করতে সহায়তা করে। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
৮. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ড্রাগন ফলটি খেতে পারেন। ড্রাগন ফলে বেশি পরিমাণে আঁশ থাকে। বেশি পড়বো নাস্তা করার কারণে ড্রাগন ফল খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণও অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস সমস্যা থেকেমুক্তি পেতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। এবং যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ড্রাগন ফলটি খেতে পারেন। ড্রাগন ফলটি একটি সুস্বাদু ফল গর্ভবতী মায়েরাও এ ফলটি খেতে পারেন।
৯. বয়সের ছাপ দূর করতে
ড্রাগন ফল বয়সের ছাপ দূর করতে এবং ত্বকের দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এর উপস্থিতির কারণে ড্রাগন ফলকে আন্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস বলা হয়ে থাকে। ত্বককে দৃত রাখতে এবং বয়সের ছাপ দূর করতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রয়োজন হয়। যা ড্রাগন ফল থেকে পাওয়া যায়।
১০ . কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে
একটি পরিপক্কর ড্রাগন ফলে প্রায় ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে। যা দৈনিক সুপারিশকৃত পরিমাণে চরভাগের এক ভাগ। ফাইবার অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণে সাহায্য করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এই ফলটি খেতে পারেন। এতে উপকার পাবেন বলে আশা করা যায়।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

ড্রাগন ফল যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারি এমন অপকারিও। আমরা প্রায় সবাই জানি সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে এই ফল খেলে কিছু সাইড ইফেক্ট দেখা। অনেক খুশি
হয়ে রয়েছে কিন্তু অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এছাড়া এ ফল খাওয়ার পর অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে হাইপোটেনশ, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা ও হতে পারে। আবার নিম্ন রক্তচাপও হতে পারে।

একটি ড্রাগন ফলের ভিটামিন এর পরিমাণ 

  1. প্রতি 100 গ্রাম ফলের লাল বা সাদা অংশ রয়েছে 21 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং খনিজ লবণ।
  2. প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ৩ গ্রাম আঁশ থাকে। যা দৈহিক চাহিদার ১২ শতাংশ এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড ওমেগা-9 থাকে ।
  3. ড্রাগন ফলে ফাইবারের পরিমাণ প্রায় ৭ গ্রাম।

মন্তব্য

ড্রাগন ফল শরীরের জন্য ভীষণ উপকারি। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পরিণত পরিমানে খাওয়া উচিত। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আপনাকে ড্রাগন ফলের ১০ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানানো চেষ্টা করলাম। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url