চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি

আখ বা ইক্ষুকে প্রক্রিয়াজাত করে চিনি উৎপন্ন করা হয়। চিনি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। চিনি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। চিনি খাওয়ার অপকারিতা
অনেক। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আজকের আর্টিকেলটিতে চিনি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি, বাচ্চাদের উপর চিনির ক্ষতিকর প্রভাব সে সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
.
চিনির ব্যাপকতা আমাদের জীবনে অনেক। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ আমরা সবাই চিনির মিষ্টি স্বাদের সাথে অভ্যস্ত। চিনি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি অপকারীও। আমাদের শরীরে চিনি খুব দ্রুত শক্তি যোগাতে সাহায্য করে রক্তের নিম্নচাপকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে এর উপকার

করে শরীরের কোথাও কেটে গেলে ঠিক করতে সাহায্য করে ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের উপকার করে। তবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ রোগের রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আজকে আর্টিকেলটিতে চিনি খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি

চিনি খাওয়ার অপকারিতা অনেক। চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি সে সম্পর্কে জানা যাক,

চিনি ইনসুলিন বৃদ্ধি করে

বেশি মাত্রায় চীনের গ্রহণ করলে এটি একটি তাৎক্ষণিক ফলাফল হচ্ছে ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত চিনি আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে জিনিস হওয়ার খুব একটা ক্ষতির কারণ না হলেও নিয়মিত চিনি শরীরের অনেক ক্ষতি করে। নিয়মিত চিনি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে

নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।ইনসুলিন এর মাধ্যমে মানবদেহের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রিত হয়। বেভারেজের শর্করা খুব দ্রুত শোষিত হয়, যার কারণে রক্তে শর্করা ও ইনসুলিন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সময়ের সাথে সাথে রেজিস্ট্যান্সের দিকে ধাবিত যেখানে শরীর সক্রিয় হতে ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। যা ব্যক্তির বিপাকীয়
স্বাস্থ্যকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। তবে প্রাকৃতিক শর্করা যেমন বিভিন্ন ফল থেকে পাওয়া শর্করাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। কারণ প্রাকৃতিক শর্করার সঙ্গে ফাইবার যুগ্মভাবে থাকে, ফলের ফাইবার ধীরে ধীরে শর্করা শোষণের সাহায্য করে। অতিরিক্ত ইনসুলিন বৃদ্ধি হলে সেটা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই পরিমিত পরিমাণে চিনি খাওয়া প্রয়োজন। 

চিনি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে

চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি সে সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রায় বেশিরভাগ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭১ লক্ষ। শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মানবদেহে ইনসুলিন এর পরিমাণ কমে গেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনি খাওয়া একেবারে উচিত নয়।চিনি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর আবার উপকারী। ক্ষতিকর বলার কারণ চিনি মানবদেহে ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা ডায়াবেটিস

রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে অনেক সময় প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার চিনে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী এইজন্য যে, ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার লেভেল কমে গেলে রোগীর দেখা দিতে পারে। এমন অবস্থায় রোগীকে একটু সুগার খাওয়ালে রোগীকে প্রাণ সংশয় থেকে বাঁচানো যায়।

চিনি ওজন বৃদ্ধি করে থাকে

অতিরিক্ত ওজন একটি জটিল সমস্যা। এর সাথে অনেক গুলো বিষয় জড়িত। শরীরে অতিরিক্ত ওজন হতে পারে অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে, বংশগত বা কম শারীরিক পরিশ্রমের জন্য। আমাদের শরীরে যখন প্রয়োজনের তুলনায় শর্করার পরিমাণ অতিরিক্ত হয় তখন সে অবশিষ্ট শর্করা
আমাদের শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়। চিনির সাথে ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণা দেখা গেছে, চিনির সঙ্গে ওজন বৃদ্ধির ও স্থূলতা সম্পর্ক আছে, যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বিকাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আমাদের মধ্যে এমন অনেকের রয়েছেন যারা চা কফি লাচ্ছি ইত্যাদি পানীয়তে অতিরিক্ত চিনি
খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। যেটা একদমই ভালো অভ্যাস নয়। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস যত দ্রুত ত্যাগ করা যায় তা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে মেদ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিনি যুক্ত পানীয় পান করলে শরীরে অর্ধেক চর্বি জমতে প্ররোচিত করে। যা হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।

চিনি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে

অতিরিক্ত চিনি খাওয়া মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি বিষয়। চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি সে সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চিনির সঙ্গে সংঘ হৃদরোগ জনিত মৃত্যুর সংযোগ রয়েছে। উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহণ করলে শর্করার সঙ্গে লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন নামক এক প্রকার রক্তের

লিপিড বৃদ্ধির সংযোগ রয়েছে, যা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় চিনি হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রোগের সৃষ্টি কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ কিডনি, আর্টারির কার্যক্রম ও গঠন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা পালনকারী মস্তিষ্কে কেন্দ্রের উপর চিনি গ্রহণের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ টিস্যের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে বিভিন্ন রোগবালায় সৃষ্টি হতে পারে।

চিনি আপনাকে ক্ষুধার্ত রেখে দিতে পারে

চিনি খেলে পুষ্টি পাওয়া যায় না। যেহেতু চিনি ছেড়ে প্রকৃত পুষ্টি পাওয়া যায় না সেহেতু চিনি আপনাকে ক্ষুধার্ত অনুভব করাতে পারে। চিনি প্রকৃত খুদা ধ্বংস করতে পারে না। যারা অতিরিক্ত চিনি খাই তাদের প্রকৃত ক্ষুধা দূর হয় না। চীনের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। চিনি খাওয়ার অপকারিতা অনেক।

দাঁতের স্বাস্থ্য নষ্ট করে

দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য চিনি ক্ষতিকর। দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য চিনি খাওয়ার বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। দাঁতের ক্ষয় রোগের জন্য মূলত চিনি অনেকটা দায়ী। ঘনঘন মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে খাবারের
আমাদের মুখে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে অ্যাসিড উৎপন্ন করে। যা দাঁতের ক্ষয় রোগের জন্য দায়ী। সাধারণত বাচ্চাদের দাঁতের ক্ষয় রোগটি বেশি দেখা যায়। প্রায় সব বাচ্চার মধ্যেই এই সমস্যাটি কোন না কোন সময় হয়ে থাকে। এর জন্য চিকিৎসকগণ দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

লিভারের ক্ষতি করে

চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি সে সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। অতিরিক্ত চিনি খেলে লিভারের আশেপাশে চর্বির স্তর তৈরি হয়। যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লিভারের আশেপাশে চর্বি জমার ফলে লিভারের কার্যক ক্ষমতা কমে যেতে থাকে।

স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে আলঝেইমারস নামক রোগ সৃষ্টি হতে পারে। যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

রক্ত চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে

চিনি শরীরের রক্ত চলাচলে ধমনীর দেওয়ালে পুরুত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে যার ফলে শরীরে স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে না এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।

শরীরে ফ্যাট জমাতে থাকে

অতিরিক্ত চিনি খেলে তলপেটে চিবুক হাত ও পায়ের পেশী সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ফ্যাট জমতে শুরু করে।যার ফলে শরীর খুব দ্রুত মোটা হয়ে যায়। শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমলে এর আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

বিষন্নতা

চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি সে সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। প্রতিদিন নিয়মিত অতিরিক্ত চিনি খেলে বিষন্নতার সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া শরীরে সবসময় ক্লান্ত বোধ হতে পারে।

বাচ্চাদের উপর চিনির ক্ষতিকর প্রভাব

প্রায় সব বাচ্চারাই মিষ্টি জাতীয় বা চিনি জাতীয় খাদ্য খেতে পছন্দ করে। কিন্তু অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার জন্য বাচ্চাদের দাঁত, চোখ, স্থুলতার মত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাচ্চাদের মিষ্টি জাতীয় পানীয় খাওয়া একেবারে উচিত নয়, বাচ্চাদের মিষ্টি জাতীয় খাদ্য এতে নিরুৎসাহিত করা।
যুক্তরাজ্যের মতো রাজ্যে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২৩% দাঁতের সমস্যায় ভুগে থাকে। বাংলাদেশে এর সংখ্যা অজানা। শিশুদের জন্য মিষ্টি জাতীয় খাদ্য না খাওয়াই ভালো। চীনের মধ্যে থাকা কেন রে শিশুদের ক্ষুধা নষ্ট নষ্ট করে ফেলে যার কারণে যে খাবারে অরুচি দেখা যায়। শিশুদের খাবারে অরুচি প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া। আর শিশুরা সঠিকভাবে না খেলে তাদের শরীরে ভিটামিন, ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। যার ফলে শিশুরা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে।

মন্তব্য

এতক্ষণ আমরা চিনি খাওয়ার অপকারিতা কি সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। চিনি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি তবে এর অপকারিতা অনেক। চিনি খাওয়ার অভ্যাস একটু একটু করে বাদ দিতে হবে। আশা করি আর্টিকেলটি পরে আপনি উপকৃত হবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url