জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

আমরা অনেকেই মনে করে থাকি জন্ডিস একটি রোগ কিন্তু আসলে জন্ডিস কোন রোগ নয় এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। সাধারণত আমরা জন্ডিস বলতে আমাদের শরীর চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়াকে বুঝি। এটা ঘটে থাকে মূলত বিলুরুবিন নামক রঞ্জক বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে। জন্ডিস খুব সাধারণ রোগ
মনে হলেও অনেক সময় এটি মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে। জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

জন্ডিস কি ও কেন হয়

আসলে জন্ডিস একটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। আমরা সাধারণত জন্ডিস বলতে শরীর, চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়াকে বুঝি। শরীরে যখন বিলোরুবিন নামক রঞ্জকের মাত্রা বেড়ে যায় তখন এমনটা ঘটে থাকে। আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকাগুলো 

একটা সময় স্বাভাবিক নিয়মে ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা পরবর্তীতে লিভার প্রক্রিয়াজাত করে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশ করে। অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যেকোনো অসংগতি দেখা দিলে

রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রম যে কোন অসংগতি তো দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। লিভারের প্রদাহতে বিলিরুবিনের বিপাক বা 
মেটাবলিজম বাধাগ্রস্ত হলে, পিত্তরসে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে, লোহিত রক্তকণিকার দ্রুত অত্যাধিক পরিমাণে ভেঙে গেলে ইত্যাদি বেশ কিছু কারনে জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।

জন্ডিস রোগের কারণ

জন্ডিস রোগের কারণ গুলোকে কয়েক ভাবে ভাগ করা যায়। যেমন -
  • থ্যালাসেমিয়া
  • ভাইরাসের সংক্রমণ
  • হিমোলাইটিক এনিমিয়া
  • লিভার সিরোসিস
  • লিভার প্যানক্রিয়াস পিত্তোনালির ক্যান্সার
  • ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
  • কিছু বিরল জেনেটিক রোগ ( উইলসন ডিজিস ) বা অটোইমিউনডিজিস ইত্যাদি।

জন্ডিস রোগের লক্ষণ

জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো হলোঃ 
  • জন্ডিস হলে শরীর চোখ ও প্রস্রাব হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
  • জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব দেখা দেয়।
  • শরীর অস্বাভাবিক ভাবে দুর্বলতা লাগে।
  • ভাইরাল হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে মুখে খাদ্য গ্রহণে অরুচি ও বমি বমি ভাব দেখা যায়।
  • অনেক সময় পেট ব্যথার সমস্যা হতে পারে।
  • শরীরে চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ফ্যাকাসে, সাদাটে পায়খানা বা আলকাতরার মত কালো পায়খানা হতে পারে।
  • পেট ও পায়ে পানি জমা হয়ে ফুলে যেতে পারে।
  • পেটে ল্যাম্প বা চাকা অনুভূত হতে পারে।

জন্ডিসের প্রকোপ কখন বাড়ে

সাধারণত গ্রীষ্মকালেই জন্ডিস এই প্রকোপ বেশি দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে দূষিত পানি, শরবত গ্রহণের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জন্ডিসের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বা বন্যায় গ্রাম থেকে নগর সব জায়গাতে পানি দূষণের মাধ্যমে এই রোগ মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পায়। এ সময়

অধিকাংশ পানিই দূষিত থাকে। যারা বন্যার কবলে থাকে তাদের বাধ্য হয়ে এই পানি পান করতে হয়। যার ফলে জন্ডিসহ আরও অন্যান্য রোগ খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

জন্ডিসের ঝুঁকি

চিকিৎসকবিদরা বলেন, বাংলাদেশের সব বয়সের মানুষের ভাইরাস জনিত লিভার প্রদাহ বা একই অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। ইংরেজি A, B, C, D & E এ অক্ষরগুলো দিয়ে ভাইরাস গুলোর নামকরণ করা হয়। আমাদের দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমনের হার সবচেয়ে
বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। এটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ তৈরি করে না কিন্তু কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই ভাইরাস গুলোর একটি ভাল দিক হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকে সরে ওঠে। তাদের শরীরে ততদিনে অ্যান্টিবডি তৈরি
আরো পড়ুনঃ 
হয়ে যায়। A ও E হচ্ছে ভাইরাসজনিত লিভার রোগ। এবং B ও C ভাইরাস জনিত লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার রোগ সহ লিভারের অন্যান্য রোগের বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ প্রচলিত ভাষায় জন্ডিস এ আক্রান্ত। বাংলাদেশের দেড় কোটির বেশি মানুষ লিভারের দীর্ঘস্থায়ী রোগ হেপাটাইটিস 'বি' এবং ১০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানান চিকিৎসকরা।

জন্ডিস প্রতিরোধের উপায়

জন্ডিস রোগ প্রতিকারের জন্য বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে জন্ডিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন-
  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা বি ভাইরাসিটিকা সরকারি টিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাই কেউ এই সেবাটি সরকারি ভাবে নিতে নিতে পারেন।
  • নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করা।
  • বিশুদ্ধ পানি পান করা।
  • রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর পানি বা খাবার না খাওয়া।
  • সরকারিভাবে বিপুল পরিমাণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। কারন অস্বাস্থ্যকর পানিতে হেপাটাইসিস ই ছড়ানোর ঝুঁকি খুব বেশি থাকে।
  • অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শরীরে অতিরিক্ত ওজন ফ্যাটি লিভার ডায়াবেটিসের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
  • ক্রনিক লিভার ডিজিজ এর জন্য বিশেষ অংশগ্রহণ করতে হবে।
সাধারণত একজন মানুষের জন্ডিসের উপসর্গ গুলো চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে সাধারণত একা একাই এই রোগটি সেরে যাই। কিন্তু যদি দেখা যায় যে চার সপ্তাহ পার হয়ে গেল জন্ডিসের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো রয়ে গেছে, তবে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে সেটা

স্টোন, টিউমার বা অন্য কোনো উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে কিনা জানতে হবে। যদি সঠিক সময় চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এর জটিলতা আরও বেড়ে যেতে পারে। এইসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্য বিলিরুবিনের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে এতে জন্ডিস হয়েছে কি না বোঝা যাবে। এছাড়া আপনার লিভার

সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা বা ফুলে গেছে কিনা তাহলে আপনি নির্ভর ফাংশন পরীক্ষা ইউরিন টেস্ট, লিভারের আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান, লিভার বায়োপসি বা এমআরআই টেস্ট করতে হতে পারে। আসলে আপনার কন্ডিশনের উপর আপনাকে নির্ধারণ করে দিবেন কি কি পরীক্ষা করাতে হবে।

জন্ডিস হলে কি কি টেস্ট করতে হয়

জন্ডিস এর উপসর্গ দেখা দিলে সর্বপ্রথম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক যদি শারীরিক পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে পারেন আপনার জন্ডিস হয়েছে কি না। জন্ডিস হয়েছে কিনা সেটা বোঝা যায় বিশেষ করে চোখ ও ত্বকের রং দিয়ে। চোখ ও শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে। জন্ডিস এর উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকগণ বিলিরুবিন পরীক্ষা, হেপাটাইটিস এ বি এবং সি পরীক্ষা, এফ বি সি (রক্ত কণিকার পূর্ণ গণনা ) এইসব টেস্ট করতে দিয়ে থাকেন।

জন্ডিস হলে করণীয় কি

জন্ডিসের আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবশ্যই সচেতন হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অত্যাধুনিক চিকিৎসার যুগেও গ্রাম অঞ্চলের এমনকি শহরের অনেক মানুষ এখনো বিশ্বাস করেন জন্ডিস হলে কবিরাজেকে দেখাতে হবে এবং তাদের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা হবে। এই

মনোভাবের কারণে অনেক সময় এই রোগের জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। আবার অনেকে মনে করেন আখের রস খেলে জন্ডিস ভালো হয়। যা একেবারে ভুল ধারণা। চিকিৎসকরা আখের রস উৎসাহিত করেন আখের রসের আলাদা কোন উপকারিতা নেই বরং ডায়াবেটিস থাকলে শর্করা বেড়ে

যেতে পারে যার ফলে হেতের বিপরীত হতে পারে। তাই জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হেপাটাইসিস বি, সি এবং ডি দূষিত রক্ত সিরিজ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। তাই শরীরের রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে

অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং করে নিতে হবে। ছেলেরা যারা নিয়মিত সেলুনে সেভ করতে যান তাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগের ব্যবহৃত বা অন্যজনের ব্যবহৃত ব্লেড পুনরায় ব্যবহার করা না হয়। এবং মেয়েদেরও হওয়া উচিত। জন্ডিস প্রতিরোধে গর্ভবতী নারীদের খুব সাবধানে থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় প্রায়

নারীরা বাইরের খাবার খেয়ে থাকেন এতে অসতর্কভাবেও যদি শেষ ৩ সপ্তাহের মধ্যে কোন গর্ভবতী মা হেপাটাইসিস 'ই' তে আক্রান্ত হয় তাতে মা ও গর্ভে শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। যার টিকা নেওয়া থাকলেও জন্ডিস প্রতিরোধে রাখা সম্ভব হয় না। মনে রাখতে হবে রাখতে হবে আক্রান্ত হওয়ার পর টিকা দিয়ে কোন লাভ হয় না। তাই আগেই সুস্থ থাকা অবস্থাতেই টিকা নিতে হবে।

জন্ডিস প্রতিকারে ঘরোয়া পদ্ধতি

বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে জন্ডিস প্রতিকার করা সম্ভব। কিছু ঘরোয়া উপায় জন্ডিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় চলুন জন্ডিস নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জেনে নিই-
  • প্রতিদিন অন্ততপক্ষে আট গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পানি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দিয়ে লিভার ফাংশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • লিভার পরিশোধনে আনারস খুবই উপকারী একটি ফল। কেটে বা জুস বানিয়ে খেতে পারেন।
  • জন্ডিস হলে হজমের সমস্যা হয় এজন্য মধু, কমলা লেবু, আনারস, পেঁপে ও পাকা আমের মতো খাবার গুলো খেতে পারেন।
  • লিভার ফাংশনের জন্য পুদিনা পাতা খুবই উপকারী। প্রতিদিন সকালে চার থেকে পাঁচটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে বা জুস বানিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • নবজাতকের জন্ডিস হলে প্রতিদিন আধা ঘন্টা শরীরের রোদ লাগানোর ব্যবস্থা করুন। এতে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হবে। তবে কোন অবস্থাতে কড়া রোদের মধ্যে রাখা যাবে না। সূর্যের কড়া রোদ ও অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
  • জন্ডিস হোক বা অন্য যেকোনো রোগ কোন অবস্থাতে নবজাতক শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।

জন্ডিসের ঔষধ

জন্ডিসের জন্য নিজস্ব কোন ওষুধ নেই। তাই মনে রাখতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাওয়া যাবেনা বিনিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্ডিস কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে সেরে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াটাই এ রোগের মূল চিকিৎসা। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে এবং প্রচুর তরল নরম ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

মন্তব্য

আমাদের অনেকের মাঝেই ভুল ধারণা রয়েছে জন্ডিস মানে লিভারের রোগ। কিন্তু জন্ডিস মানে লিভারের রোগ নয়। যেকোনো বয়সে মানুষের কোন শারীরিক সমস্যা এটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে সঠিক সময় প্রয়োজনে চিকিৎসা না করালে মৃত্যু পর্যন্ত ঘুরতে পারে। তাই শরীরের যেকোনো শারীরিক

সমস্যা গুলো নিজে নিজেই সমাধান করার চেষ্টা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাকে জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার  সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো। আশা করি উপকৃত হবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য এবং আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url