থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায়

থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় - একটি প্রজাপতি আকারের ছোট আকারে গ্রন্থী যার শরীরের বেশ কয়েক বিপাক প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। থাইরয়েড গ্রন্থির প্রধান কাজ হচ্ছে আয়োডিন সংবলিত হরমোন উৎপাদন করা। সকল মেরুদন্ডী প্রাণীর মধ্যে থাইরয়েড গ্রন্থী রয়েছে। থাইরয়েড
কমানোর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং থাইরয়েড কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করতে পারেন। থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায়, থাইরয়েড হলে যেসব ফল খাবেন সেগুলো জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড রোগটি হয়ে থাকে। থাইরয়েড রোগের প্রধান দুটি ধরন হচ্ছে হাইপোথাইরডিজম ও হাইপারহাইরেডিজম। থাইরয়েড যদি জটিল পর্যায়ে না যায় তাহলে থাইরয়েড কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে থাইরয়েড এর সমস্যা দূর করা যায়। থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো জানতে সাথেই থাকুন।
.

থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায়

চলুন থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো জানা যাক-

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য

থাইরয়েড রোগ অনেক সময় ভিটামিন ডি এর অভাবে হয়ে থাকে। যদি ভিটামিন ডি এর অভাবে থাইরয়েড হয়ে থাকে তাহলে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেলে বা শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হয় এমন কিছু করলে এই রোগ থেকে নিরময়র পাওয়া যাবে। তবে যদি অসুখটি জটিল পর্যায়ে চলে যায়
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস। এইজন্য প্রতিদিন অতি ভোর বেলায় যখন সূর্য উঠে তখন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য সূর্যের আলোতে থাকতে হবে। এতে করে শরিলে ভিটামিন ডি প্রস্তুত সহ ভালোভাবে ক্যালসিয়ামের শোষণ ঘটবে এবং শরীরে
রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে দুগ্ধ জাতীয় দ্রব্য, কমলালেবুর রস, ডিমের কুসুম, ম্যাটারেল, স্যালমন ইত্যাদি। এছাড়া যদি শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা অনেক বেশি কমে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য

থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্যগুলো হলো কমলালেবু, আমলকি, ডালিম, লেবু, কামরাঙ্গা ইত্যাদি। কমলালেবুর থেকে আমলকিতে কমলালেবু চেয়ে ৮ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। আবার আমলকিতে প্রায় ১৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। এইজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাইরয়েড রোগীরা আমলকি রাখতে পারেন। আশা করা যায় অনেক উপকার পাবেন।

রান্না করা শাকসবজি

অনেক সবজি আছে যেগুলো কাঁচা খাওয়া যায়। তবে যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদের কাঁচা সবজি উত্তম। কারণ কাঁচা সবজিতে বেশি পরিমাণে গিটোজেন থাকে, যার কারনে থাইরয়েডের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। এজন্য শাকসবজি ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করে খাওয়া উত্তম। সবুজ শাকসবজি আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণে রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই রান্না করে খেতে হবে।

ভারী ধাতু থেকে ডিটক্স

আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম , মার্কারি সিসা এবং আর্সেনিকযুক্ত ভারি চর্বি পোস্ট স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে চর্বি কোষ, জমা হতে পারে। যদি নিয়মিতভাবে এটা কে এভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে এটি শরীরের জন্য প্রচুর বিষাক্ত হয়ে যাবে। শরীরকে ডিটক্স রাখতে আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কাঁচা বাদাম, চিয়া সিড, পেঁয়াজ রসুন এবং সিলিন্টার ইত্যাদি রাখতে হবে।

অতিরিক্ত চিনি বর্জন

অতিরিক্ত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চিনিতে রয়েছে অতিরিক্ত ক্যালরি। যা যেকোনো রোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা এড়াতে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া বর্জন করতে হবে। না হলে এটি থাইরয়েড সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগার

আপল সিডর ভিনেগার শরীরে অ্যাসিড ও অ্যালকিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটা ওজন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং হরমোন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি থাইরয়েড এর সমস্যা দূর করতেও কার্যকরী।
থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় -

আয়োডিনযুক্ত খাবার খাওয়া

থাইর থাইরয়েড রোগটি জন্য আয়োডিন অনেকাংশে দায়ী। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিনের অভাবে পরিমাণে থাইরয়েড রোগটি হয়ে থাকে। আয়োডিনের অভাব পূরণ করার জন্য সামুদ্রিক মাছ আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে।

থাইরয়েড হলে যেসব ফল খাবেন

কিছু কিছু ফল আছে যেগুলো খেলে থাইরয়েড রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেসব ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা যাক-
আনারস
আনারস টক মিষ্টি জাতীয় ফল। আনারস একটি মৌসুমী ফল প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়। ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ মানবদেহকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া আনারসে ভিটামিন বি পাওয়া যায়। যা আমাদের দেহে ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য

করে। অতিরিক্ত ক্লান্তি থাইরয়েডের অন্যতম লক্ষণ। এছাড়াও নিয়মিত আনারস খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য, টিউমার, ক্যান্সার রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আনারস ফলটিতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ।
বেরি
এই ফলটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটা থাইরয়েডের জন্য খুব উপকারী। বেরি ফলটি তে রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। যা আমাদের শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল দ্বারা সৃষ্ট অক্সিডেটিভ ক্ষতির থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এটি থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনকে উত্তেজিত করতে এবং তাদের নির্বিঘ্নে কাজ করতে সাহায্য করে। তাই থাইরয়েড রোগীরা এই ফলটি খেতে পারেন।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। অ্যাভোকাডোর মধ্য রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদি বহু পুষ্টি উপাদান। এটি মানব স্বাস্থ্য ও থাইরয়েডের সমস্যার জন্য বেশ উপকারী একটি ফল। যদি থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এই ফলটির খেতে পারেন।

নারিকেল
নারিকেল বা ডাব থাইরয়েড রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। নারিকেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মাঝারি-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড (MCFA)এবং মাঝারি-চেইন ট্রাই গ্লিসারাইড (MTC)। যা বিপাককে উন্নত করতে সাহায্য করে। নারিকেল ধীর বিপাককে উন্নত করতে সহায়তা করে। টাইম যারা থাইরয়েড রোগী আছেন তারা নিয়মিত নারিকেল খেলে উপকৃত হবেন।

কমলা
কোমরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল দ্বারা সৃষ্ট অক্সিডেটিভ ক্ষতির থেকে রক্ষা করে। রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন সি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি রক্তের পর করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কোলেস্টেরলের মাত্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে ত্বকের প্রতিরোধ করতে ক্ষত সারাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। থাইরয়েড রোগীরা থাইরয়েড সমস্যা নিরাময় কমলা খেলে উপকার পাবেন।

আপেল
আপেল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। এতে রয়েছে বহু পুষ্টি উপাদান খনিজ ও ভিটামিন। আপেলের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো থাইরয়েড গ্রন্থিকে মুক্ত রেডিক্যাল ক্ষতির থেকে রক্ষা করে। আপেল মানুষের শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে পারে যা থাইরয়েড গ্রন্থিতে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।
কুমড়ার বীজ
কুমড়ার বীজে জিংক পাওয়া যায়। জিংক আমাদের শরীরে খনিজ লবণ ও অন্যান্য ভিটামিন শোষণ করতে সাহায্য করে এবং শরীরে থাইরয়েড হরমোন সংশ্লেষণ করে ভারসাম্যকে উন্নত করে থাকে।

থাইরয়েড রোগীদের যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

  • ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি তোদের সবজিগুলো থাইরয়েড ওষুধের শোষণকে সীমিত করে ফেলে তাই এসব সবজি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
  • থাইরয়েড রোগীদের যাদের কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদেরকে কফি খাওয়ার সীমিত করতে হবে। বিশেষ করে ভোর বেলায় কফি খাওয়া যাবেনা।
  • যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে স্ন্যাকস, বিস্কুট, হিমায়িত প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
  • থাইরয়েড রোগীদের উচ্চ সোডিয়াম যুক্ত খাদ্য খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
  • সয়াবিন তেল খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন ছেলে থাইরয়েড রোগীদের ওষুধের শোষণে হস্তক্ষেপ হতে পারে। তাই থাইরয়েড রোগীদের সয়াবিন খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার থাইরয়েড রোগীদের জন্য ক্ষতিকর এবং ওজন বাড়াতে পারে। চিনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, যা থাইরয়েড রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
  • দই, মাখন, পনির, ঘি ইত্যাদি দুগ্ধজাতীয় খাদ্য থাইরয়েড রোগীদের খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি যদি আপনার সমস্যা বেশি হয় তাহলে অবশ্যই অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলটিতে থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো যদি অনুসরণ করতে পারেন তাহলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url