চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার

চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার- চোখ মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গ গুলো থেকে আকারে ছোট হলেও এটি শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর মধ্যে একটি। মানুষের চোখ দেখে অনেক অসুখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। চোখের সাদা অংশ লালচে হয়ে গেলে চোখ
দিয়ে পানি পরা, ব্যথা অনুভব হওয়ার সমস্যা দেখা দিলে সাধারণত আমরা সেটিকে চোখ উঠা বলে থাকি। চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার, চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ,চোখ উঠলে করণীয় কি? জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

চোখের সাদা অংশের মধ্যে লালচে ভাব, ব্যথা অনুভব হওয়া পানি পড়ার সমস্যা দেখা দিলে সেটিকে আমরা চোখ ওঠা বলে থাকি। তবে এটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় কনজাংটিভাইটিস। চোখ ওঠা রোগটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ এবং ছোঁয়াচে রোগ। আজকের আর্টিকেলটিতে চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হবে সাথেই থাকুন।

চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার

এখন চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার যেসব রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। চলুন চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা যাক-

চোখ ওঠা রোগের কারণ

এই আর্টিকেলটিতে চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হবে। চোখ ওঠা রোগটি প্রায় সময় দেখা যায় বিকট আকার ধারণ করে। মূলত এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ যার কারণে এটি খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে। চোখ উঠা রোগের মূল কারণ হচ্ছে ভাইরাস
ও ব্যাকটেরিয়া। কখনো কখনো যে কারণেও এই রোগ হয়ে থাকে। চোখের মধ্যে কনজাংটিভা নামক একটি পদ্মা রয়েছে। চোখের কন জংটিভা নামক পর্দার প্রদাহের কারণেই মূলত চোখ ওঠার রোগটি হয়ে থাকে।

চোখ ওঠার রোগটি কীভাবে ছড়ায়?

চোখ উঠার রোগটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। চোখ ওঠার ওকে আক্রান্ত ব্যক্তির গামছা, তোয়ালে, রুমাল অন্যরা অর্থাৎ ব্যক্তিরা ব্যবহার করলে করলে এই রোগ ছড়ায়। আবার এই রোগটি দ্রুত ছড়ায় হ্যান্ড টু আই কন্টাক্ট এর মাধ্যমে অর্থাৎ হাত না ধুয়ে চোখে স্পর্শ করলে মানে ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না হাত না ধুয়ে স্পর্শ করে তাহলে।

চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ

চোখ ওঠা রোগের বেশ কিছু লক্ষণ আছে এগুলো হলো -

  • চোখ দিয়ে পানি পরা- চোখ ওঠলে চোখ দিয়ে পানি পরার সমস্যা সৃষ্টি হয়। অস্বাভাবিক হারে চোখ দিয়ে পানি পরতে পারে। এইজন্য যদি কারো চোখ দিয়ে পানি পরার সমস্যা হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া - চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত হলে চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যায়। প্রথমে এক চোখ অল্প অল্প লাল হতে শুরু করে তারপর বেশি হয় এবং তারপর দুই চোখই লাল হয়ে যায়।
  • চোখের পাতা ফুলে যাওয়া - চোখ ওঠা রোগটি হলে চোখের পাতা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে।
  • চোখের মধ্যে অস্বস্তি বোধ হওয়া - চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি লক্ষণ হচ্ছে চোখের মধ্যে অস্বস্তি বোধ হওয়া। চোখের মধ্যে কেমন জানি খচখচ অনুভব হয়। আপনার যদি এই সমস্যা গুলো হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • আলো সহ্য করতে না পারা - চোখ ওঠার রোগটি হলে সাধারণত রোগীরা আলো সহ্য করতে পারে না তারা অন্ধকার থাকতে চাই। চোখ ওঠা রোগটি হলে রোগীরা সাধারণত অন্ধকারে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
  • চোখে ব্যথা অনুভব হওয়া - চোখ ওঠার রোগটি লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হলো চোখের মধ্যে ব্যথা অনুভব হওয়া। চোখ ওঠলে চোখের মধ্যে ব্যথা অনুভব হয়।
  • চোখে হালকা জ্বালাপোড়া করা - চোখ ওঠলে চোখের মধ্যে হালকা জ্বালাপোড়া শুরু হয়। যদি করো লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে তার চোখ ওঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।
  • চোখে পিচুটি হওয়া - চোখ ওঠলে চোখের মধ্যে পিচুটি (কেতুর) অনুভব হওয়া। চোখ উঠলে চোখের মধ্যে পিচুটি অনুভব হয়।
  • চোখের পাতা লেগে যাওয়া - চোখ ওঠলে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা লেগে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। পুরো চোখের মধ্যে একটি আঠালো ভাবের সৃষ্টি হয়।
  • চোখে ঝাপসা দেখা - যদি চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হয় তাহলে চোখ ওঠার রোগীরা চোখে ঝাপসা দেখে।

চোখ ওঠা রোগীদের এইসব লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে সতর্কতা অবলম্বন করে চোখের যত্ন নিতে হবে । যদিও এই রোগটি চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায় কিন্তু যদি সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

চোখ উঠলে করণীয় কি?

চোখ উঠলে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে যেগুলো করলে আপনি অনেকটা আরাম পাবেন এগুলো হলো :
  • চোখ ভেজা থাকলে চোখ পরিষ্কার টিস্যু পেপার দিয়ে নিতে হবে। ব্যবহৃত যেসব টিস্যু পেপারটি অবশ্যই ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে। না হলে যেখানে সেখানে ফেললে এর সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
  • চোখ উঠলে চশমা পরিধান করতে হবে। এতে করে চোখে স্পর্শ করা কমবে ধোয়া ধুলাবালি থেকে চোখ রক্ষা পাবে।
  • চোখ উঠলে রোগীরা সাধারণত আলোয় থাকতে অস্বস্তি বোধ করে তাই চশমা পরলে অস্বস্তি কিছুটা কমবে।
  • চোখ উঠলে কিছুক্ষণ পর পর সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • চোখ ঘষে চুল কালো থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অন্য কারো আই ড্রপ ব্যবহার করা যাবেনা।
  • অন্যের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ও প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করা থেকে রোগীকে বিরত থাকতে হবে। আবার রোগীর ব্যবহৃত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ও প্রসাধন সামগ্রী অন্য কারো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এই সময় যাতে চোখের উপর কোন পেশার না পরে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে।
  • ভিটামিন সি এর পাশাপাশি সুষম খাদ্য খেতে হবে।
  • প্রয়োজন পরলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চোখ ওঠা রোগের চিকিৎসা ও সতর্কতা

চলুন এখন চোখ ওঠা রোগের চিকিৎসা প্রতিরোধ ও সতর্কতা সম্পর্কে জানা যাক-
  • চোখ ওঠা রোগটি এমনিতেই চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
  • হাত দিয়ে চোখ চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এই সময় কালো চশমা ব্যবহার করলে ভালো হয়।
  • কালো চশমার ব্যবহার করলে আলোয় অস্বস্তি কমবে।
  • প্রয়োজন পরলে আর্টিফিসিয়াল টিয়ার, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
  • চোখ মোছার জন্য পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে।
  • চোখ মোছা টিস্যু অবশ্যই একটি ঝুড়িতে ফেলতে হবে যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। নাহলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
  • চোখ ওঠার রোগীদের কে আলাদা থাকতে হবে। যাতে অন্যদের মাঝে এটি ছড়িয়ে না পরে।
  • জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে হবে, ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।
  • প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের থেকে চোখের চিকিৎসা নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হলে করণীয় 

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

  • যদি করো চোখের খচখচে ভাব বেশি হয় বেশি পরিমাণে চোখে ঝাপসা দেখে বা কেতুর জমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • চোখ যদি বেশি পরিমাণে ব্যথা হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
  • শিশুদের ও বড়দের ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। শিশুরা যেহেতু তাদের সমস্যা গুলো ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারেনা তাই তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
  • চোখ যদি বেশি ফুলে যায় এবং বেশি অস্বস্তি বোধ হয় তাহলে পরামর্শ নিতে হবে।
  • কনজাংটিভায় যদি পানি জমে যায় তাহলে বেশি কৃষকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
  • যদি কর চোখ দিয়ে রক্ত পড়ে যদিও এটি খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • চোখ ওঠা রোগীদের চোখ লাল হলে ও সামান্য পরিমাণে পানি পড়লে সাত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো যদি সাত দিনের মধ্যে এটি না কমে বা ভালো না হয় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
  • চোখ ওঠলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুতে হবে।
এতক্ষণ চোখ ওঠার রোগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

মন্তব্য

চোখ ওঠা রোগটি কোনো মারাত্মক রোগ নয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ রোগটি এমনি এমনি চিকিৎসা ছাড়া ভালো হয়ে যায়। তাই চোখ ওঠার রোগটি হলে ভয় পাবার কোন দরকার নেই এটি একটি নির্দিষ্ট সময় একা একাই ভালো হয়ে যায় তবে প্রয়োজন পড়লে বা সমস্যা অতিরিক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ইতিমধ্যে চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। আপনার যদি কোন মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন, এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url