হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম - হাতিশুড় অত্যন্ত উপকারি একটি গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indica. হাতিশুড় এর গর্ভাশয় চার খণ্ড বিশিষ্ট। এর ফল ও বীজ ছোটো
আকৃতির হয়। রাস্তার ধারে, বন জঙ্গলে, পুরনো বাড়ির দালান ঘেঁষে যেকোনো জায়গায় খুব সহজে এদের পাওয়া যায়। হাতিশুঁড় গাছের পরিচিতি, হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা, হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

হাতিশুঁড় অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ গুন সম্পন্ন গাছ। এটি ভেষজ গুনসম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। হাতিশুঁড় গাছটিতে প্রায় সারা বছর ফুল হয় তবে বর্ষাকালে বেশি ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই আর্টিকেলটিতে হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
.

হাতিশুঁড় গাছের পরিচিতি

হাতিশুঁড় একটি ভেষজ গুণ সম্পূর্ণ গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropicum indicum. এটি এক বর্ষজীবী ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এতে কাণ্ড, পাতা, মূল, ফুল, বীজ বিদ্যমান। হাতিশুড় গাছের ফুল হাতির দাঁতের মতো শুভ্র তাই এর নামকরণ করা হয় হাতশুঁড়। এই গাছের সংস্কৃত নাম হচ্ছে শ্রী হস্তিনী।এছাড়াও হাতিশুঁড় গাছের আরো বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে। এগুলো হলো হাতিশুরি, হাতিশুন্দি,
হস্তিশুন্ডি, মহাশুন্ডি ইত্যাদি। এই কাজটি সাধারণত সব জায়গায় পাওয়া যায় পুরাতন বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে, যেকোনো আনাচে-কানাচে, বন-জঙ্গলে। গাছটির সারা দেহে ছোট ছোট রোম থাকে। এটি প্রায় এক থেকে দেড় ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এর কান্ড ফাঁপা নরম। হাতিশুঁড় গাছটিতে প্রায় সারা বছর ফুল হয় তবে বর্ষাকালে বেশি ফুল ফুটতে দেখা যায়। হাতিশুঁড় এর গর্ভাশয় চারটি খণ্ডের বিভক্ত। চলুন হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম সম্পর্কে জানি -

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা অনেক। এটি ভেষজ গুনসম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে হাতিশুঁড় খাবার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সঠিক নিয়মে না খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম সম্পর্কে জানা যাক-

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা

দাঁতের সমস্যা দূর করতে
দাঁতের জন্য হাতিশুঁড় অত্যন্ত উপকারী একটি গাছ। দাঁতের মাড়ি ফোলা সমস্যা দূর করতে এটি ভীষণ কার্যকরী। দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাতিশুঁড় এর মূল চিবিয়ে খায় তাহলে দাঁতের মাড়ি ফোলা সমস্যা দূর হয়। যাদের দাঁতের মাড়ি ফোলা সমস্যা রয়েছে তারা উপায়ে দাঁতের মাড়ি ফোলার সমস্যা দূর করতে পারেন।

সর্দি দূর করতে
সর্দি দূর করতে হাতিশুঁড় অত্যন্ত কার্যকারী। এর জন্য হাতিশুঁড়ের পাতা ভালো মত পরিষ্কার করে বেটে বা ব্লেন্ড করে রস খেতে হবে। চাইলে মধুর সাথে মিক্স করে খেতে পারেন। এতে সর্দি দূর হবে।

একজিমা থেকে মুক্তি
যাদের একজিমার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য হাতিশুঁড় খুবই উপকারী। একজিমা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাতিশুঁড় গাছের পাতা থেতলে আক্রান্ত স্থানে দিতে হবে। এভাবে কয়েকদিন এমনভাবে আক্রান্ত স্থানে লাগালে একজিমার সমস্যা দূর হবে।

রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দূর করতে
রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিসের অর্থাৎ বাতের ব্যথা সমস্যা দেখা দিলে হাতিশুঁড় গাছের রস গরম তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগালে ব্যথা দূর হবে।
টাইফয়েড নিরাময়ে
প্রাকৃতিক উপায় টাইফয়েড নিরাময় জন্য হাতিশুঁড় অত্যন্ত উপকারী। টাইফয়েড জাতীয় কোন জ্বর দেখা দিলে রোগীকে হাতিশুঁড় গাছের পাতা গরম করে একটু গরম করে খাওয়ালে টাইফয়েড নিরাময় হবে।

গলা ব্যথা বা ফেরিনজাইটিস সমস্যা দূর করতে
গলা ব্যথা বা ফেরিনজাইটিস সমস্যা দূর করতে হাতিশুঁড় অত্যন্ত কার্যকার একটি ভেষজ উপাদান। হাতিশুঁড় কিভাবে খেলে দূর হবে তাই তো? চলুন জানা যাক, গলা ব্যথা সমস্যা দূর করার জন্য হাতিশুঁড় গাছের রস গরম পানিতে মিশিয়ে মুখে নিয়ে গরগরা বা গার্গল করতে হবে। এভাবে বেশ কয়েকবার করতে হবে। আশা করা যায় এতে গলা ব্যথা সমস্যা দূর হবে।

ছত্রাক জনিত সমস্যা দূর করতে
ছত্রাক জাতীয় কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রাকৃতিক উপায়ে সেটা দূর করার জন্য হাতিশুঁড় অত্যন্ত কার্যকর একটি উপাদান। ছত্রাক জনিত সমস্যায় চামড়ার ওপর চাকা হয়ে গেলে সেইখানে হাতিশুঁড় গাছের রস লাগলে ছত্রণিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ব্রণের সমস্যা দূর করতে 
যারা মুখে ব্রণ নিয়ে অত্যধিক চিন্তিত রয়েছেন তর তারা হাতিশুঁড় ব্যবহার করতে পারেন। হাতিশুঁড় ব্যবহার করলে আপনি উপকৃত হবেন। এর জন্য আপনাকে প্রথমে হাতিশুঁড় এর পাতা ভালোভাবে ধুঁয়ে একটু থেতলিয়ে ব্রণ হওয়ার স্থানে লাগাতে হবে। এভাবে পর পর কয়েকদিন ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর হবে। যারা প্রাকৃতিক উপায় ব্রণ দূর করতে চান তারা এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন। এতে উপকৃত হবেন।

কাটা ক্ষত স্থান নিরাময়ে
শরীরের কোন জায়গা কেটে গেলে বা ক্ষতস্থানে সৃষ্টি হলে সেই ক্ষতস্থান নিরাময়ের জন্য হাতিশুঁড় মারাত্মক কার্যকরী। কাটা ক্ষত স্থান থেকে তৎক্ষণিক রক্ত বন্ধ করতে হাতিশুঁড় ব্যবহার করা যায়। শরীরের কোন জায়গা কেটে গেলে বা ক্ষত স্থানের সৃষ্টি হলে হাতিশুঁড় গাছের অংশ থেতলে দিলে কাটা স্থান রক্ত পড়া বন্ধ হবে এবং দ্রুত সে জায়গা সেরে উঠবে।

আঘাত প্রাপ্ত স্থানে ব্যথা নিরাময়ে
শরীরের কোন জায়গায় আঘাত পেলে নিরাময়ের জন্য বা ব্যথা কমানোর জন্য হাতিশুঁড় অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ। এটি তাৎক্ষণিক ব্যথা নিরাময়ের জন্য ভীষণ কার্যকরী। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে হাতিশুড় গাছ বেঁটে দিলে দ্রুত ব্যথা নিরাময় হয়।

শরীরে আঘাত জনিত ফোলা ভাব দূর করতে
শরীরে কোন জায়গায় ফোলা ভাব দেখা দিলে সে জায়গায় হাতিশুঁড় গাছ বেটে দিলে ফোলা ভাব দূর হয়।

বিষাক্ত পোকার কামড়ে
শরীরের কোন জায়গায় বিষাক্ত পোকা কামড়ালে সে জায়গায় হাতিশুঁড় পাতার রস লাগালে জ্বালা এবং ফোলা ভাব কমে যায়। 

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম - উপরে হাতে হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন এখন হাতিশুঁড় গাছ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা যাক -

হাতিশুঁড় গাছ খাওয়ার নিয়ম

হাতিশুঁড় গাছে শিকড়, পাতা, মূল, ফুল সবকিছুই খাওয়া যায়। চলুন হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা যাক -

হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম

হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে গাছটি সংরক্ষণ করতে হবে শিকড় সহ। তবে খেয়াল রাখতে হবে গাছটি যেন খুব কম বয়সী বা ছোট না হয়। কারণ অপ্রাপ্তবয়স্ক গাছের মূল কোনো কাজে আসবে না। এর জন্য সহ হালকা হলুদ রংয়ের পাতা নির্বাচন করতে হবে। এরপর সেটি বাসায়এনে ভালোমতো পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। গাছের শিকড়টি খাওয়ার উপযোগী করার জন্য
চারটি উপাদান প্রয়োজন হবে। এগুলো হচ্ছে গাছ, মধু, কালোজিরা ও পান। প্রথমে সবগুলো উপাদান ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর প্রথমে পান নিয়ে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ। তারপর এক চিমটি কালোজিরা ঐ পানের উপর দিতে হবে। সবশেষে এক চা চামচ মধু পানের উপর দিয়ে বাজারে তৈরিকৃত পানের মতো করে পানটিকে ভাঁজ করে খেয়ে ফেলতে হবে।

কখন হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাবেন?

  • যদি কারো শরীরের কোন জায়গা ফুলে যায় তাহলে হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের রস বের করে পানিতে সিদ্ধ করে খেলে ওই জায়গার ফোলা ভাব কমে যাবে।
  • শরীরের কোন জায়গায় আঘাত লাগলে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় বেটে লাগিয়ে দিলে ব্যথা নিরাময় হবে।
  • যদি কারো কোন জ্বর ঠান্ডা কাশি হয় তাহলে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় পানিতে ফুটিয়ে ওই পানি পরবর্তীতে ঠান্ডা করে খেলে ঠান্ডা কাশি থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
আমরা এতক্ষণ হাতিশুঁড় গাছের ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম এখন হাতিশুঁড় গাছের অপকারিতা সম্পর্কে জানব।

হাতিশুঁড় গাছের অপকারিতা

হাতিশুঁড় গাছের তেমন খুব একটা অপকারিতা নেই। আমরা এতক্ষন হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। হাতিশুঁড়ের দু একটা অপকারিতা রয়েছে চলার সেগুলো জানা যাক-
  • হাতিশুঁড় গাছের মূলে সামান্য এলার্জি উদ্রেক রয়েছে। তাই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরকে হাতিশুঁড় গাছের মূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের হাতিশুঁড় গাছের মূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • হাতিশুঁড় গাছের শিকড় মানব শরীরে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে তাই যাদের রক্তচাপ কম তাদেরকে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

মন্তব্য

হাতিশুঁড় অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ গুন সম্পন্ন গাছ। আজকের আর্টিকেলটিতে হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এইসব তথ্য জেনে আপনি উপকৃত হবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url