পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা

পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা - পুদিনা একটি জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদ পুদিনার বৈজ্ঞানিক নাম Mentha spicata. এটি খুব সহজেই চাষ করা যায়। পুদিনা পাতা সুগন্ধীর জন্য অনেক বেশি জনপ্রিয়। পুদিনা পাতা
কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। পুদিনা পাতার উপকারিতা অনেক। পুদিনা পাতায় রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও লৌহ সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ। পুদিনা পাতা বিভিন্নভাবে খুব সহজে চাষ করা যায়। পুদিনা গাছের ডাল থেকে পুনরায় গাছ তৈরি করা সম্ভব। পুদিনা পাতার ডাল ভেজা মাটিতে লাগিয়ে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন গাছের জন্ম হয়। পুদিনা একটি অত্যন্ত উপকারী গাছ। এর অর্থনৈতিক চাহিদাও ব্যাপক। এখন পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে সাথেই থাকুন।

পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা

পুদিনা পাতার উপকারিতা অনেক। মানুষ বিভিন্নভাবে পুদিনা পাতা ব্যবহার করে থাকে। চলুন এখন পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক -

মাথা ব্যথা উপশমের জন্য

পুদিনা পাতায় রয়েছে মেন্থল যা পেশিকে শিথিল করার মাধ্যমে মাথা ব্যথা কমায়। পুদিনা পাতার রস বানিয়ে কপালে মাখালে ব্যথা অনেকটা কমে যায়। আবার পুদিনা পাতার চা বানিয়ে খেলেও মাথা ব্যথার উপশম হবে। এছাড়াও পুদিনা পাতার থেকে তৈরি অসংখ্য মলম মাথায় লাগালে মাথা ব্যথার উপশম হয়। এইগুলো হল প্রাকৃতিক উপায়ে মাথাব্যথা কমানোর টেকনিক।পুদিনা পাতার নিদ্রাস থেকে তৈরি অসংখ্য মলম রয়েছে মাথাব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয়।

দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা রক্ষায়

দাঁত ও মারিস সুরক্ষার জন্য একটি আদর্শ উপাদান হচ্ছে পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতা সুগন্ধি যুক্ত হওয়ায় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। পুদিনা পাতা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য কাঁচা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারে। আবার পুদিনা পাতার নির্যাস দিয়ে
তৈরি মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলেমুখের ভেতরে থাকা জীবন ও ধ্বংস হবে এবং দাঁত ও মাড়ি সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকবে।দাঁতের ও মাড়ির সুরক্ষার জন্য নিয়মিত পুদিনা পাতার নির্যাস দিয়ে তৈরি মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

মানসিক চাপ কমাতে

মানসিক চাপ কমানোর জন্য সুগন্ধি যুক্ত প্রথম সারির উপাদান গুলোর মধ্যে পুদিনা পাতা অন্যতম। পুদিনা পাতার কড়া সুগন্ধ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার কড়া সুগন্ধে রক্তে কর কটিসল নামক হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়।যার ফলে জৈবিক মানসিক চাপ সামাল দেয়ার ক্ষমতা

সক্রিয় হয়। পুদিনা পাতার সুঘ্রানে রক্তে এই সেরোটোনিন নামক হরমোন মিশ্রিত হয়। যার ফলে মানসিক অশান্তি ও হতাশও কমে। এইজন্য কেউ অতিরিক্ত মানসিক অশান্তিতে থাকলে অন্তত কিছুক্ষণ সময়ের জন্য মানসিক স্বস্তি পেতে পুদিনা পাতার সুঘ্রান নিতে পারেন। তবে যাদের পুদিনা পাতার ঘ্রাণ পছন্দ নয় তাদের জন্য এটা নয়।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে

পুদিনা পাতায় রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও লৌহ সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। এইসব খনিজ উপাদান গুলো রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্র বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ হিমোগ্লোবিন কম রয়েছে তারা নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। চাইলে পুদিনা পাতার জুস, চা বা যেকোনো রান্নার সাথে বা কাঁচা খেতে পারেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে

হজমের সমস্যা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তবে মাঝে মাঝে আবার কারো ডেইলি হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। হজমের সমস্যা দূর করার জন্য বা শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত পুদিনা পাতা খেতে পারেন। পুদিনা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, মেন্থর ইত্যাদি

উপাদান। এই সব উপাদানগুলো হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে সক্ষম। যার কারণে হজম হয়ে সহতো হয়। এছাড়া পুদিনা পাতায় রয়েছে এসেন্সিয়াল ওয়েল। যা একটি শক্তিশালী জীবাণু নাশক। পাকস্থলীকে শীতল করতে অম্লীয় খাবার হজম করতে সাহায্য করে। যার কারনে পেটের গোলমাল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

হাঁপানি সমস্যা থেকে মুক্তিতে

নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে ভবনের সমস্যা পাওয়া যাবে। যাদের হাঁপানি সমস্যা রয়েছে তারা তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পুদিনা পাতা রাখতে পারেন। পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে বুকে কফ জমা রোধ হয়। এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে মেন্থল, যা ফুসফুসে আটকে যাওয়া

মিউকোস ছাড়ায়। এছাড়াও মেন্থল নাকের ফুলে ওঠা মেমব্রেনকে সারিয়ে তোলে। যার ফলে শ্বাস নেওয়ার কষ্ট দূর হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত না খাওয়া হয়ে যায়। না হলে আবার শ্বাসনালীতে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে পুদিনা পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের জ্ঞানী ও ক্ষমতা বাড়াতে পুদিনা পাতা সাহায্য করে। এরজন্য অবশ্যই নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি ও সতর্কতা বৃদ্ধি পাবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে

ওজন নিয়ন্ত্রণে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী উপাদান। পুদিনা পাতা থেকে তৈরি এসেন্সিয়াল অয়েল হজম ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে এবং বর্জ্য অপসারণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণের সহায়ক হিসেবেও কাজ করে করে। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে। পুদিনা পাতায় থাকা পুষ্টি উপাদান

গুলোর জন্য শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান তারা নিয়মিত পুদিনা পাতা খেতে পারেন। পুদিনা পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। পুদিনা পাতা রান্নায় ব্যবহার করে খাওয়া যায়, সালাদের সাথে খাওয়া যায়, পুদিনা পাতার জুস বানিয়ে খাওয়া যায়, পুদিনা পাতার চায়ের বানিয়ে খাওয়া যায় বা কাঁচা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। আপনার সুবিধা মত আপনি খেতে পারেন।

ত্বকের যত্নে পুদিনা পাতা

পুদিনা পাতায় ব্যাকটেরিয়া নাশক ও প্রদাহ নাশক ঘুম থাকার কারণে পুদিনা পাতা ব্রণের সমস্যা দূর করতে মারাত্মক কার্যকরী উপাদান বলা যায়। পুদিনা পাতায় রয়েছে উচ্চমাত্রায় স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যা ব্রণের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও ত্বক পরিষ্কার রাখতে এটি বেশ কার্যকর। পুদিনা পাতা মৃত কোষ দূর করতে এবং কড়া পোড়া অংশ স্বাভাবিক করতে ভালো কাজ করে থাকে।

সর্দি কাশি ঠান্ডা দূর করতে

আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য আমাদের প্রায় বিভিন্ন সময়ে সর্দি, কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ, ঠান্ডা ইত্যাদি সমস্যা লেগেই থাকে। এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য পুদিনা পাতা অত্যন্ত কার্যকর। বাজারে ফার্মেসিতে বহু হারবাল সর্দি কাশি ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিরাপ পাওয়া যায়, যার অধিকাংশই পুদিনা পাতা তৈরি। আপনি যদি ওষুধ খেতে না চান তাহলে পুদিনা পাতা ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন এতে অনেকটা উপকার পাবেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধে

পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে থাকেন। কথাটি শুনতে আশ্চর্য হলেও এই কার্যকারিতা সত্যি। পুদিনা পাতায় রয়েছে পেরিলের অ্যালকোহল যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে থাকে। এইজন্য পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

চুলের উকুন দূর করতে

পুদিনা যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতায় কার্যকরী তেমনি মাথার উকুন দূর করে আরাম দিতেও কার্যকরী। পুদিনা পাতার শেকড়ের মাথার উকুন দূর করতে সক্ষম। এই জন্য প্রথমে পুদিনা পাতার শেকর নিতে হবে। এরপর গোটা মাথার চুলের গোড়ায় পুদিনা শেকড়ের রস ভালো করে লাগাতে

হবে। এরপর চুলগুলো মতো একটি পাতলা কাপড় দিয়ে কিছুক্ষণ পেঁচিয়ে রাখুন। প্রায় এক ঘন্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে দুইবার এমন করুন। এরপর এক মাসের মধ্যেই ভালো ফলাফল দেখতে পাবেন।

গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে

গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য পুদিনা পাতার রস অত্যন্ত উপকারী ও কার্যকরী। গ্রীষ্মকালে যখন আমরা ডিহাইড্রেশন এ ভুগে থাকি তখন আমাদের শরীরকে হাইড্রেট করার জন্য এক গ্লাস পুদিনা পাতার জুস যথেষ্ট। পুদিনা পাতার জুস খাওয়ার ফলে তাৎক্ষণিক আমাদের শরীরকে ঠান্ডা সতেজ করে

তোলে। এছাড়াও শরীর ঠান্ডা করার আরও একটি উপায় হচ্ছে গোসলের আগে গোসলের ঠান্ডা পানির মধ্যে কিছুটা পুদিনা পাতা ফেলে রাখতে হবে এবং এই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর ও মন মুহূর্তে ভালো হয়ে যাবে।

আঘাতপ্রাপ্ত ব্যথা নিরাময়

আঘাতপ্রাপ্ত ব্যথা নিরাময় পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী উপাদান। আঘাত প্রাপ্ত ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক নিরাময়ের জন্য পুদিনা পাতার রস খুবই উপকারী। এটি চামড়ার ভেতরে গিয়ে নার্ভের নার্ভে পৌঁছায়। এইজন্য মাথাব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা আঘাত প্রাপ্ত ব্যথা, যেকোনো ব্যথা থেকে পাওয়ার জন্য পুদিনা

পাতার ব্যবহার করতে পারেন। জয়েন্টে বা আঘাত প্রাপ্ত ব্যথা হলে পুদিনা পাতা বেটে বা থেতলিয়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগাতে হবে। এতে তাৎক্ষণিক ব্যথা নিরাময় হবে। মাথা ব্যাথা হলে পুদিনা পাতায় চা বানিয়ে খেতে পারেন অথবা কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারে। এতে মাথাব্যথা দূর হবে।

সংক্রমণ এড়াতে

যেকোনো সংক্রমণ এড়াতে পুদিনা পাতা অত্যন্ত কার্যকারিতা উপাদান। যা অ্যান্টিবায়োটিক এর মত কাজ করে। দেহের সংক্রমণ এড়ানোর জন্য আপনাকে পুদিনা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে তারপর শুকনো পাতা পানি দিয়ে ফুটিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ঠান্ডা হওয়ার পর এই মিশ্রণটি ফ্রিজে রাখতে হবে। এইবার এক বালতি পানির জন্য ১০ থেকে ১৫ চামচ ফ্রিজে রাখা পুদিনা পাতার পানি
নিয়ে গোসলের পানির সাথে মিশাতে হবে। এরপর এই পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। এইভাবে নিয়মিত গোসল করলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন। পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যাস্টিনজেন্ট। যা গরমকালে ব্যাকটেরিয়াজ জনিত দুর্গন্ধের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ঘামাচি এলার্জি থেকেও রক্ষা করে।

এতক্ষন পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হল।

মন্তব্য

পুদিনা পাতা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ। এটি মানুষের বিভিন্ন কাজে লেগে থাকে। আজকের আর্টিকেলটিতে ইতিমধ্যেই পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পুদিনা পাতার ১৫টি উপকারিতা নিয়ে আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগবে ।এতক্ষন সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

https://www.dyinamicit.com/p/blog-page_16.html

comment url